গান স্যালুট ও চোখের জলে তাপস পালকে শেষ বিদায়

নিউজ ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০, ০৬:২৬ পিএম

ঢাকা : বাস্তবের মাটিতে রুপোলি পর্দার নায়ক। পিছু পিছু দৌড়চ্ছেন অগণিত ভক্ত। স্রেফ চোখের দেখা দেখতে কাড়াকাড়ি। বুধবার তাপস পালের শেষযাত্রাতেও সেই চেনা ছবিটার ব্যতিক্রম ঘটলো না। শুধু যেনো বদলে গেল চিত্রনাট্য আর আবহ। প্রিয় নায়ককে এ দিন চোখের জলে বিদায় জানালো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা।

মফসস্বল থেকে টলিউড। সেখান থেকে বলিউড ছুঁয়ে আসা। নায়ক হিসাবে একের পর এক মাইলস্টোন পেরিয়ে যাওয়া। সেই বৃত্ত যেনো সম্পূর্ণ হলো। বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ গল্ফ ক্লাব রোডের বাড়ি থেকে বেরোয় তাপস পালের মরদেহ। সঙ্গে ছিলেন তাপস পত্নী নন্দিনী ও কন্যা সোহিনী। লক্ষ্য ছিলো রবীন্দ্র সদন। সেখানে ‘সাহেব’ কে এক ঝলক দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও। উপস্থিত ছিলেন টালিগঞ্জের শিল্পী, পরিচালক ও কলা-কুশলীরাও।

এ দিন বেলা ১ টা পর্যন্ত রবীন্দ্র সদনে রাখা হয়েছিলো তাপস পালের দেহ। তার পর দেহ নিয়ে আসা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সেখানে গান স্যালুট দেওয়া হয় তাঁকে। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসসহ অনেকেই। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

অভিনয় জগৎ থেকে রাজনীতির বৃত্তে আসা। ধীরে ধীরে রাজ্যের শাসকদলের আস্থাভাজন হয়ে ওঠা। এক সময় নানা বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তাপস পাল। তাঁকে গ্রেফতারও হতে হয়। এক বছরেরও বেশি সময় জেলবন্দি ছিলেন তাপস। সেই সময় থেকেই অভিনয় জগতের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিলো তাঁর। শেষযাত্রায় সেই দূরত্ব মুছে গেল। এ দিন সেখানে ছিলেন সতীর্থ কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, সোহম, ভরত কল, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকেই।

কেওড়াতলায় গান স্যালুটের পর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। তারপর ধীরে ধীরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু। এক সময় শেষও হয়ে গেলো তা। নায়কোচিত গ্ল্যামার আর বিতর্কের ধূসরতা, এ দিন দুইই মুছে গেল চোখের জলে, বিষাদে। ঠিক যেমন ভাবে ‘দেহ পট সনে নট’ মিলিয়ে যায়, সে ভাবেই।

চিরঘুমে চলে গেলেন 'সাহেব', ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল প্রয়াত এই অভিনেতার। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ২২ বছর বয়সে। দাদার কীর্তি ছবি দিয়ে বাঙালি দর্শকের মনে এক আলাদা জায়গা করে নেন তাপস পাল। তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক ছবিতেই। এরপর উপহার দিয়েছেন দর্শকদের অনেক ভালো ও অন্য ঘরানার ছবি।

কাজ করেছেন তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিংহ, হরনাথ চক্রবর্তীর মত পরিচালকের ছবিতে। ভালোবাসা ভালোবাসা' ছবিটির পর টলিউড পায় এক নতুন জুটি। দেবশ্রী-তাপস জুটি। বক্স অফিসে সাফল্য এনে দিয়েছিল সেই ছবি। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সালে যুক্ত হন রাজনীতিতে। তবে বেশকিছু কটূক্তি তার জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোক প্রকাশ করে এদিন বলেন, ‘জন্মালে মৃত্যু থাকবেই, কিন্তু তাপসের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। এটা অকাল মৃত্যু আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিনা। আমি ওর স্ত্রী নন্দিনী ও মেয়ে সোহিনীর প্রতি সমবেদনা জানাই।’

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রয়াত তাপস পাল মেয়ের সঙ্গে দেখা করে মুম্বই থেকে ফেরার পথে মুম্বাই বিমানবন্দরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে তাকে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন অভিনেতা। পরে মঙ্গলবার রাতেই তার মরদেহ কলকাতা এসে পৌঁছায়। সুত্র : আনন্দবাজার

আগামীনিউজ/সবুজ