ঠাকুরগাঁওঃ জেলার হরিপুর উপজেলার চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক একই পরিবারের।
স্কুলটির চারজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক আরফান আলী ও সহকারী শিক্ষক মিতালি পারভিন ভাই-বোন। আরফানের স্ত্রী সুরাইয়া পারভিন ও ফুপু শাশুড়ি রেহেনা পারভিনও সেখানে চাকরি করছেন।
স্থানীয়দের মধ্যে এই নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। তবে আরফানের দাবি, তার পরিবারের সদস্যদের মেধা ছিল। তারা নিয়োগ পেয়েছেন।
উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বহরমপুর বাজারের মুদি দোকানি নুরুল ইসলামের ছেলে আরফান। ২০০০ সালে তিনি চা-পরোটার দোকান চালাতেন। পরের বছর বাবার ৩৩ শতাংশ জমিতে তিনটি ঘর তৈরি করে চরভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।
২০১১ সালে বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমতি এবং ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তিনিই শুরু থেকে প্রধান শিক্ষক।
সরকারি হওয়ার আগেই আরফান নিয়োগ দেন স্ত্রী, ছোট বোন ও ফুপু শাশুড়িকে। তারাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি চাকরি পেয়ে যান।
গ্রামের আলতাফুর রহমান নামে একজন প্রতিবেদককে বলেন, ‘একই পরিবারের চারজন সদস্যের কীভাবে নিয়োগ হলো, তা আমরা জানতে চাই। এলাকায় তো আরও শিক্ষিত মানুষ ছিল। তাদের চাকরি হলো না কেন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল কি না, এটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।’
বকুয়া ইউনিয়নের ঘইশা গ্রামের মো. মোস্তফা বলেন, ‘এখানে তো প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এসেছেন। তারা কি জানতেন না যে নিয়োগটি কীভাবে হচ্ছে?’
চরভিটা গ্রামের তরিকুল ইসলামের অভিযোগ, ২০১৬ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক আরফান আলীকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন চাকরি পেতে। চার বছর শ্রমও দিয়েছিলেন ওই স্কুলে। কিন্তু লাভ হয়নি। চাকরি পেয়েছেন তার স্ত্রী, বোন ও ফুপু শাশুড়ি।
তরিকুলের দাবি, তিনি তার দেয়া টাকার কমই ফেরত পেয়েছেন। বাকি টাকা দিচ্ছি বলে ঘোরাচ্ছেন আরফান।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে আরফান আলী বলেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবেই হয়েছে। যোগ্যতা থাকলে একই পরিবারের চারজনের চাকরি হতেই পারে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, ‘একই পরিবারের চারজনের চাকরির বিষয় আমার জানা নেই। এটা আমি আসার আগে হয়েছে। সরকারি নিয়মের মধ্যে থাকলে সে বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।’
হত্যা মামলার আসামি..........
ওই বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরায় থাকা একজনকে খুনের অভিযোগে আরফানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রায় আট বছর আগে মোফাজ্জল হোসেন নামে একজনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার বাড়িতে নিয়ে যান আরফান। চাকরি পাওয়ার আশায় এই সময়ে বিনা বেতনে তার বাসায় ও বিদ্যালয়ে কাজ করে আসছিলেন তিনি।
গত ৩০ মার্চ রাতে ওই প্রধান শিক্ষকের বাসা থেকে রাতের খাওয়া শেষে স্কুলে যান মোফাজ্জল। পরদিন সকালে স্কুলের পশ্চিম পাশে একটি ভুট্টা ক্ষেতের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরে গত ২৫ আগস্ট প্রধান শিক্ষক আরফানকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন মোফাজ্জলের বাবা আমির হোসেন। বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নৈশপ্রহরী হিসেবে তার ছেলের বদলে টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে নিয়োগ দিতে মোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়েছে।
আমিরের দাবি, এই মামলা করার পর থেকে তাকেও একটি চক্র মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তাই তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বাদীর আইনজীবী মোস্তাক আলম টুলু বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। সঠিক তদন্ত হলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।’
হত্যা মামলার বিষয়ে আরফান বলেন, ‘আমাকে আসামি করতেই পারে। আমি দোষী তখনই হব, যখন আমার দোষ প্রমাণ হবে।’
পিবিআই ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত চলছে। রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বিস্তারিত জানা যাবে
আগামীনিউজ/নাসির