বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা বিকৃত করে প্রদর্শন এবং অবমাননার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার্জশিট ভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে তাদের বহাল রাখায় সচেতনমহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।
চার্জশীট ভুক্ত আসামীদের মধ্যে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক; গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট, রহমতুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী প্রভোস্ট, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. রশিদুল ইসলাম শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট, শাহ জামান পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, মার্কেটিং বিভাগের মাসুদ উল হাসান শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের পরিচালক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে চার্জশীট ভুক্ত মামলার আসামীদের সাময়িক বহিস্কার সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন উক্ত মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোহা. মাহামুদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্য ড. এম হাফিজুর রহমান জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার অন্যতম আসামী এবং আরেকজন আসামী তাবিউর রহমান প্রধান গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটিতে জাতীয় পতাকা অবমাননা মামলার বাদী মোহা. মাহামুদুল হককে হুমকি প্রদান করেছে এবং জাতীয় পতাকা মামলা করার কারণে ওই বিভাগের কতিপয় শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজস করে মাহামুদুল হককে এক পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
দায়ের করা জাতীয় পতাকা মামলার প্রধান অভিযুক্ত তৎকালীন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ৭৫তম সিন্ডিকেট পতাকা অবমাননাকারীদের সর্তক করে এবং তাদের দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। কিন্তু এ ধরনের পতাকা অবমাননার অপরাধ ক্ষমা করার এখতিয়ার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন-২০০৯ মোতাবেক সিন্ডিকেটের নেই বরং এই সাব-জুডিস বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
চলমান জাতীয় পতাকা মামলায় জামিনরত আসামীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত না করে বরং পুরষ্কার হিসেবে বেশ কয়েকজন আসামীকে পদোন্নতি দিয়েছে যেভাবে মেজর জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচার করার পথ বন্ধ করে খুনিদের পুরষ্কৃত করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্নেল আবু হেনা মুস্তাফা কামাল আগামী নিউজকে বলেন,অফিসিয়ালি আমি এখনো কোন কাগজ হাতে পাইনি। কাগজপত্র হাতে পেলেই উপাচার্য মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, মামলা নিয়ে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আশা করি আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাকে পরবর্তীতে এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও মামলার বাদী মোহা. মাহামুদুল হক বলেন, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংঙ্গীত বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা আঘাত করে তাদের শাস্তি হয়নি এমন রেকর্ড নেই। তাই জাতীয় পতাকা অবমাননার আসামীদের আগেই বরখাস্ত করা উচিত ছিলো। এখন তাদের বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট দিয়েছে। জাতীয় পতাকার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে আসামীদের সাময়িক বরখাস্ত করা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বিকৃত নকশার জাতীয় পতাকা নিয়ে ছবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা। উক্ত ঘটনায় ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মোহা. মাহামুদুল হক।
আগামীনিউজ/নাসির