গ্রন্থাগার শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএ’কেই দিতে হবে

সোহেল মিয়া মে ২৩, ২০২১, ০১:২৭ পিএম
ফাইল ফটো

ঢাকাঃ  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিন্ড বলা হয় গ্রন্থাগারকে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তত বেশি সাফল্যমন্ডিত। আর এই মহৎ বিভাগটির যিনি দায়িত্ব পালন করে  থাকেন তাকে  গ্রন্থাগারিক বলে। 

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, এই গ্রন্থাগারিক পদটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরম ভাবে অবহেলিত ছিল। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষকদের থেকে যোগ্যতা কোন অংশেই এদের কম ছিলনা। বরং অনেক শিক্ষকের থেকেও গ্রন্থাগারিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি। যার প্রমাণ জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ ও ১১ তম গ্রেড। নিশ্চয় ১১ তম গ্রেডের ব্যক্তিদের থেকে ১০ তম গ্রেডের ব্যক্তিদের যোগ্যতা বেশি। তা না হলে গ্রেড বিভাজন থাকত না।
 
আজকের লেখাটি যোগ্যতা বিষয় নিয়ে না হলেও প্রসঙ্গক্রমের জন্যই তুলনা করা হলো।  লেখার মূল বিষয় নিয়োগ সংক্রান্ত। গ্রন্থাগারিকরা কেন ১০ তম গ্রেডে থেকেও তারা নিজ সহকর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত হোন।
 
এর বেশ কয়েকটি কারণ থাকলেও আজ শুধু নিয়োগ ও গ্রন্থাগার সনদ নিয়েই কথা বলব। আমরা সবাই অবগত আছি যখন স্কুল পর্যায়ে গ্রন্থাগারিক পদটি সৃষ্টি করা হলো তখন এক যোগে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার হিড়িক ছুটে গেল। আর এই নিয়োগ কাজে চাকরি প্রত্যাশিতদের থেকেও বেশি গরজ দেখা দিল প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটিদের। ফলে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়ে গেল নিয়োগ বাণিজ্য। 
 
কোন রকম একটা সনদপত্র হলেই হলো। ম্যানেজিং কমিটি চায় নিয়োগ দিতে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগল দেশের শত শত বেকার যুবকেরা। তারাও মরিয়া হয়ে উঠল সনদ জোগাড়ের। যেকোন মূল্যেই হোক তাদের একখান লাইব্রেরি সায়েন্সের সনদ চায়। এরই মধ্যে আলাদিনের চেরাগ হাতে নিয়ে আর্বিভাব হলো লাইব্রেরি সায়েন্সের  সনদ দেওয়ার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। সে সনদ জাল না সঠিক তা আমি বলতে চাচ্ছিনা। যারা নিয়েছেন তাদের বিবেকের কাছেই সে প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি।
 
ব্যাস ব্যাটে বলে লেগে গেল সবার। এবার চলছে পুরোদমে নিয়োগ বাণিজ্য। জনশ্রুতি রয়েছে মাত্র ৭-৮ লাখ টাকা ম্যানেজিং কমিটিকে দিতে পারলেই রফা-দফা সাড়া। জীবনে চাকরি নামের সোনার হরিণ পেয়ে যাচ্ছে তারা। 
 
আমার বেলাতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে ওরা পেরে উঠতে পারেনি। কারন ওদের প্রার্থীর যেমন ছিল ভূয়া সনদের দুর্বলতা তেমনি সংসদ সদস্যের কড়া হুঁশিয়ারি। টাকা নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধে সংসদ সদস্যে মো: জিল্লুল হাকিমের কড়া হুঁশিয়ারিতে ওরা পরাস্ত হয়ে যায়। যেহেতু এতদিন ধরে গ্রন্থাগারিক পদটি কমিটি নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করে আসছে। সেহেতু এখনো তারা সেই পায়ঁতারাই চালাচ্ছে। এটা এখন আর কোন মতেই কাম্য নয়।
 
আইনগত ভাবে এখন আর সেটা হওয়ার সুযোগ নেই। কারন আগে এই পদটির মানুষ না ছিল শিক্ষক না ছিল কর্মচারী। কিন্তু এখন সরকার ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রন্থাগারিকরা এখন শিক্ষক। জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা (স্কুল-কলেজ) ২০২১ এ গ্রন্থাগারিকরা শিক্ষক প্যাটার্নভুক্ত হয়েছে।
 
যেহেতু শিক্ষকদের নিয়োগ এনটিআরসিএ দিচ্ছে সেহেতু সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান) এবং গ্রন্থাগারিক (প্রভাষক) পদ দুটিকেও নিয়োগ দিতে হবে এদেরকেই। এর কোন বিকল্প নেই। এখান থেকে পেছানোরও কোন সুযোগ নেই। আমরা মনে করি এনটিআরসিএ’র নিয়োগের মাধ্যমে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীরাই এই পদটিকে অলংকৃত করতে পারবে।
 
লেখক:
 
সোহেল মিয়া, শিক্ষক ও সাংবাদিক