পতিত সময়কাল বাড়িয়ে 

শিমজাতীয় ফসলের চাষে বাড়াবে মাটির পুষ্টিগুণ

বাকৃবি প্রতিনিধি, তানিউল করিম জীম এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৭:১৯ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

ময়মনসিংহ: আমন-বোরোর মাঝের পতিত সময়কাল বাড়িয়ে (৭০-১০০ দিন) সবজি হিসাবে খাওয়া যায় এমন শিমজাতীয় ফসল (যেমন মটরশুটি, লিগনোসাস শিম, ঝাড় শিম, ফেলন, সয়াবিন এবং মুগ ইত্যাদি ) চাষের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন এবং মাটির জৈব ও পুষ্টিগুন বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কে জি এফ) অর্থায়নে তিন বছর মেয়াদে এই গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে ফসল উদ্ভিদ বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা কার্যক্রমের কো-অর্ডিনেটর ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. কাজী ফারহাদ কাদির এবং সহযোগী গবেষক ড. মো. নেছার উদ্দীন।

গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম একটি বার্ষিক ফসলধারা হচ্ছে দ্বি-ফসলি আমন-বোরো যা মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ২২%। আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী স্বল্পসময়কাল যার ব্যাপ্তি ৬০ দিনের কম। কোন প্রচলিত ফসল চাষের জন্য যথেষ্ট না হওয়ায় কৃষকরা এসময় কোন ফসল না করে জমি পতিত রাখে। কিন্তু আগাম স্বল্পকালীন রোপা আমন (যেমন বিনাধান ৭) এবং নাবী বোরো ধান (যেমন বিনাধান ১৪) জাতগুলোর চাষ করে আমন-বোরোর মাঝের পতিত সময়কাল বাড়িয়ে (৭০-১০০ দিন) সবজি হিসাবে খাওয়া যায় এমন শিমজাতীয় ফসল (যেমন মটরশুটি, লিগনোসাস শিম, ঝাড় শিম, ফেলন, সয়াবিন এবং মুগ ইত্যাদি) আবাদ করা যেতে পারে। এতে করে ফসলের শস্য নিবিড়তা (cropping intensity) যেমন বাড়বে সেই সাথে শিম জাতীয় গাছসমুহের ফল ব্যতিত অন্য অংশ মাটির সাথে মিশিয়ে মাটির উৎপাদনশীলতার সূচকগুলিরও
উন্নয়ন সম্ভব।

তারা আরো বলেন, আমরা কিছুকাল আগে উদ্ভিদের বৃদ্ধি উদ্দিপক রাইজোব্যাক্টেরিয়ার (plant growth promoting rhizobacteria) (নাইট্রোজেন ফিক্সিং, ফসফরাস সলিউবিলাইজিং, মেটাল সলিউবিলাইজিং এবং অক্সিন উৎপাদনকারী) একটি ফরমুলেশন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যা অণুজীব সার হিসাবে প্রয়োগ করলে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ে। গবেষণা প্রকল্পে আমরা দ্বি-ফসলি কৃষি জমিতে শিম জাতীয় ফসল ও অনুজীব সার প্রচলনের সম্ভাব্যতা যাচাই করি। এ উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় ধান ও শিমের উৎপাদন ও পুষ্টিগুণের যাচাই করা হয়। পাশাপাশি মাটির উর্বরতায় এর প্রভাবও মুল্যায়ন করা হয়। আমাদের অনুমান (hypothesis) অনুজীব সার প্রয়োগ করে আমন ও বোরোর মাঝখানে সংক্ষিপ্ত জীবন কালের শিম জাতীয় ফসলের চাষ একদিকে মোট ফলন ও ফসলের পুষ্টিমান বৃদ্ধি করবে, অন্যদিকে মাটির
উর্বরতাও বাড়াবে।

গবেষকরা আরো বলেন, ৩ বছর গবেষণা করে আমরা দেখেছি যে, এই উৎপাদন ব্যবস্থায় শিম পরবর্তী বোরো ধানের উৎপাদন ২৫-৩৫% পর্যন্ত বাড়ে যায়। এজন্যে অনুজীব সারের প্রয়োগসহ মটরশুটি ও ঝাড়শিমের চাষ কৃষকের জন্য সবচেয়ে লাভজনক বলে মনে করছেন গবেষকরা।

আগামীনিউজ/মালেক