ঢাকাঃ এমপিওভুক্ত নীতিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নীতিমালা জারি হতে যাচ্ছে। তবে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অর্থছাড়ের আগে সাতটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব শর্ত বাস্তবায়িত হলে এ বাবদ অর্থ ছাড় দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব তনিমা তাসমিন সই করা এক পত্রে এসব শর্তের কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে অর্থ ছাড়ে প্রস্তাবিত সংশোধনীসহ এ সংক্রান্ত নথিসহ নতুন নীতিমালার খসড়া অর্থ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপরই অর্থ বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ শর্তগুলো দিয়েছে। সেখানে স্বীকৃতির শর্ত তুলে দেয়ার বিরোধিতা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার শর্ত গার্লস কলেজের জন্য ছাড় দিয়ে সেখানে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতোই বহাল রাখতে বলেছে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে- মানসম্মত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে এবং সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে সব শিক্ষক-কর্মচারী একসঙ্গে নিয়োগ না করে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে নিয়োগ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা সদর এবং পৌরসভায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পদ-বহির্ভূত অতিরিক্ত কর্মচারীর পদ (যেমন- অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী এবং আয়া) নতুনভাবে সৃষ্টি না করে এসব পদে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন হলে নিজস্ব অর্থায়নে নিয়োগের বিধান রাখতে হবে।
তবে মফস্বল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কম থাকায় প্রস্তাবিত নীতিমালায় শুধু এসব এলাকার ক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-অষ্টম), মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-দশম) এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ষষ্ঠ-দ্বাদশ) ‘অফিস সহায়কের’ একটি করে নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এমপিওভুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আদেশ দিতে পারবেন,’ এই বিধানের পরিবর্তে, ‘এমপিও নীতিমালা ও বাজেট বরাদ্দের আলোকে শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইপূর্বক সুপারিশের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার বিধান রাখতে হবে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অন্যান্য শর্তাবলির সঙ্গে হালনাগাদ স্বীকৃতি বা অধিভুক্তির শর্ত বহাল রাখতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শুধু নারীদের জন্য পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ বা স্নাতক (পাস) কলেজের জন্য কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতো আনুপাতিক হারে কম রাখতে হবে।’
বর্তমানে ৭৫ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে একটি করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাপ্যতা রয়েছে। নতুন শর্তে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা ৬৫ হাজারে সীমিত করতে এবং চারটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ঐচ্ছিক) প্রস্তাবিত তৃতীয় শিক্ষকের পদ সৃজন না করতে বলা হয়েছে।
এ চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) মো. মোমিনুর রশীদ জানান, তারা অর্থ বিভাগের চিঠি পেয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত কমিটির সভা হয়েছে। আগামী মার্চ আবারো সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এসব বিষয়ে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।’