নাগালের বাইরে মাছ, বেড়েছে সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২১, ২০২৩, ০১:২২ পিএম

ঢাকাঃ মাছের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে নেই অনেকদিন। বর্ষায় এখন ভরা মৌসুম চললেও বাজারে কমেনি মাছের দাম। বরং তা আরও বেড়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে কয়েক পদের সবজি ও রসুন। 

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সবজির দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। মানভেদে সব ধরনের সবজিতে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। সবজির সঙ্গে দাম বেড়েছে সব ধরনের শাকের দামও। অপরিবর্তিত রয়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ, ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম।

শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। যেখানে কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, শসা ৬০ টাকা, গাজর ৬৫-৭০ টাকা, বেগুন মান ও বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। টমেটো ২০০ টাকা, ফুলকপি ৭০, কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, আকারভেদে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা, আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমানে এসব বাজারে প্রতি আঁটি লালশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলার শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ, কুমড়াশাক ৪০ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় রুই প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট কাতল ৩০০ হলেও বড় কাতলা ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকা, বড় সাইজের বোয়াল ৬০০-৭০০ ও ছোট সাইজের বোয়াল ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট পাবদা ৩৫০, বড় পাবদা ৫৫০-৬০০, পাঙাশ ১৮০-২২০, আইড় ছোট ৩৫০, বড় ৬০০-৭০০ টাকা, টাটকিনি ১৫০, সরপুঁটি ২০০, সামুদ্রিক কোরাল ৪০০, রূপচাঁদা ৬০০, সিলভার কার্প ২০০, চাষের শিং ৩৫০-৪০০, কৈ ১৮০-২০০, শোল ৭০০-৮০০ ও দেশি মাগুর ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা বাজারে আল আমিন নামের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারে এলে মাথা ঠিক থাকে না। টাকায় কুলোয় না বলে প্রয়োজনের অর্ধেক কেনাকাটা করে বাসায় ফিরতে হয়।

তিনি বলেন, সাধ থাকলেও সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কেনা যায় না। পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, সিলভার কাপের মতো মাছের দামও কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে এসব মাছও এখন আগের মত খেতে পারি না।

সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতা শাহিন হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন থেকেই সবজির দাম বাড়ছে। উত্তরবঙ্গ ও সিলেট বিভাগে বন্যায় বহু ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকের অনেক ফসলও নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বন্যায় যান চলাচলও কিছুটা ব্যাহত ছিল, যার কারণে সবজির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। দাম আরও বাড়তে পারে।

একই বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এ ছাড়া কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে সবজি আনতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে। যে কারণে দাম একটু বেশি।

বাজার করতে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে আমরা হয়তো বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারব না। না খেয়েই মরতে হবে। মাছ-মাংস তো কিনতেই পারি না। একটু সবজি খাব, সেই সবজির দামও অনেক। সব কিছু আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বাজার করতে আসা মো. ইব্রাহিম বলেন, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ায়। এ সপ্তাহে আবার বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাতে এর দাম বাড়িয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন সরবরাহ কম, কিন্তু বাজারে ঘুরে কোনো ধরনের সবজির ঘাটতি দেখা যায়নি।

এদিকে এলাকাভেদে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের বাদামি ডিমের হালি এখনো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়েছে ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে স্বস্তি ফেরেনি চিনির দামে। প্রতি কেজি চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

বুইউ