কাঁচা মরিচের সঙ্গে বেড়েছে মাছ-সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৪, ২০২৩, ১২:৩৭ পিএম

ঢাকাঃ অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে নাকাল মানুষ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। হুটহাট দাম বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ।

বেশ কিছুদিন ধরেই কাঁচা মরিচের দাম আকাশচুম্বী। ভারত থেকে আমদানির খবরে দাম কিছুটা কমে ছিল। এরপর থেকে একদিন কমে তো আরেকদিন বাড়ে। বর্তমান প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে মাছ ও সবজির দাম। 

অন্যদিকে আদা, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, ভোজ্যতেল ও চিনি- এ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম কিছুতেই সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে না। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরছেন নিম্নবিত্তরা। দাম বাড়তি থাকায় পকেটের টাকায় তারা কিনতে পারছেন না প্রয়োজনের সব পণ্য।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০, ঝিঙা ৭০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গুঁড়ি কচু প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, দেশি আলু (লাল) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে আগের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাংস। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা এবং লাল লেয়ার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাঙাশ মাছ সাইজ ভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ টাকা, রুই মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট গুড়া মাছ (কাচকি) প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, চাষের কই ৩০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৭০০ টাকা, বড় কাতল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, বোয়াল মাছ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, সিলভার কার্ভ (ছোট) প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার ওপরেই আটকে আছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা। আর প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আজাহার মোল্লা। তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। কোনো সবজির দাম জিজ্ঞেস করলেই অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। এত দাম দিয়ে সবজি কেনা সম্ভব? গত সপ্তাহে তবুও সবজির দাম কম ছিল, আজ বাজারে এসে দেখছি দাম বেড়ে গেছে। দাম বাড়ায় এক কেজির জায়গায় আধাকেজি কিনতে হচ্ছে।

সজিবুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাড়তি দামের কারণে ভালো কোনো মাছ আমাদের মতো নিম্ন আয়ের লোকজনরা কিনতে পারছে না। পাঙাশ, তেলাপিয়া, চাষের কই সাধারণত বেশি কেনা হয়। আজকের বাজারে দেখা যাচ্ছে এগুলোর দামও বেড়ে গেছে।

কাঁচা মরিচের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, পাল্লাপ্রতি (৫ কেজি) পাইকারিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। সে হিসেবে কেজি পড়ছে ৩০০ টাকার ওপরে। এছাড়া গাড়ি ভাড়া ও কিছু খরচ মিলিয়ে খুচরা পর্যায়ে কেজিতে দাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৪০০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. হিরণ মিয়া বলেন, এখন সবজির মৌসুম নেই। বেশ কয়েক জায়গায় বৃষ্টি ও বন্যায় বাজারে সবজির সরবরাহ কম। কারওয়ান বাজারে এখন আগের মতো সবজি আসছে না। যেগুলো আসছে সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী বিল্লাল হোসেন বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে ৮০ টাকা, মাছের দামও বেশি। রুই মাছ কিনলাম ৩৮০ টাকা কেজি করে। সবজির বাজারেও একই অবস্থা। ৩০-৪০ টাকার মধ্যে কোনো সবজি নেই। এককথায় সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে দাম না কমায়, তাহলে তো জনগণের কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা যখন যেভাবে ইচ্ছা এভাবে পণ্যের দাম বাড়ায়, আর আমরা সেই দামেই কিনতে বাধ্য। একটা সময় ২০ টাকা দিয়ে মাছ কিনলে তিন-চার দিন খাওয়া যেত, আর এখন ২০ টাকায় বাজারে কোন সবজিও নেই। চার-পাঁচটা কাঁচা মরিচের দামই এখন ২০ টাকা।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। মানুষের আয়-ইনকাম কমে গেছে। অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে ঘুরছে। এই অবস্থায় বাজার যদি এমন ঊর্ধ্বমুখী হয়, তাহলে আমরা বাজার করবো কী করে? আমাদের সংসার চলবে কী করে?

বুইউ