বাংলাদেশের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন আইএমএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ১১:২৬ এএম

ঢাকাঃ বাংলাদেশের জন্য ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ ঋণ অনুমোদন করা হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ২.২ শতাংশ সুদে নেওয়া সাত কিস্তির এই ঋণের প্রথমটি আগামী ফেব্রুয়ারিতেই পেতে পারে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার ছাড় হওয়ার আশা করছে সরকার। শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়া বাংলাদেশ রিজার্ভ বাড়াতে এমন অর্থের প্রত্যাশায় ছিল। বাংলাদেশকে ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় আইএমএফ।

সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। এরপর বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ এর নির্বাহী বোর্ডের সভায় ওঠে এবং অনুমোদন পায়।

ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এই ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ, মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এই ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিল, তাদের প্রতি জানাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা এই ঋণ প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা’।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো বা আমাদের এই ঋণ দেবে না। তাঁরা ভেবেছিলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো দুর্বল, তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলারের যে ঋণ চেয়েছে, তার মধ্যে তিন ধরনের ঋণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। ইসিএফ এবং ইএফএফ থেকে পাওয়া যাবে ৩২০ কোটি ডলার। আরএসএফ থেকে পাওয়া যাবে ১৩০ কোটি ডলার।

চুক্তি অনুযায়ী এ ঋণ পাওয়া যাবে ৪২ মাসে সাত কিস্তিতে। প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা মার্চ মাসের শুরুতে পাওয়া যেতে পারে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।

ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে থাকছে আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো আইনের সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার ও কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি করা, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজ বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু বিষয়। ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে মোটাদাগে ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি খাতের সংস্কার চায় আইএমএফ।

বুইউ