পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত থাকবে টানা এক মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১১, ২০২১, ০৬:০৩ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও আগামী এক মাসে পেঁয়াজের দাম কমবে না বলে জানালেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত সরবরাহ আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতির স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। 

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পোর্টে কনজেশন আছে। নতুন পেঁয়াজ বা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আসছে না বাজারে। তাই আগামী এক মাস পেঁয়াজের দাম কমছে না।’

রোববার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটউটের (বারি) দুটি গবেষণাগার পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, গ্রীষ্মকালীন ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসার পরপরই আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে সেই এপ্রিল মাসে, এত দিন পর্যন্ত পেঁয়াজ থাকে না। তাই পেঁয়াজচাষিরা সব বিক্রি করে দেন। পেঁয়াজ পচনশীল ও মজুত রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে দাম বেড়ে যায়।

কৃষিমন্ত্রীর সেই কথার সূত্র ধরে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৮০ শতাংশই আমাদের দেশি পেঁয়াজের মাধ্যমেই হতে হবে। কিন্তু রাতারাতি তো আর উৎপাদন বাড়ানো যায় না। উন্নত জাত প্রচলন, বীজ সরবরাহ, কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে ইনসেনটিভ দিতে হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ। তারপর আমরা পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন হতে পারব। কৃষি মন্ত্রণালয় ৩-৪ বছর সময় চেয়েছিল, যার মধ্যে দেড় বছরের মতো সময় গেছে।  কৃষকদের ইনসেনটিভ দেওয়ার প্রাইস একটা লেভেল পর্যন্ত রাখতে হয়। আবার প্রাইস বেড়ে গেলে ভোক্তারা হৈচৈ করেন। কৃষি পণ্য যে মৌসুমী পণ্য সেটা মাথায় রাখতে হবে। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে কৃষি পণ্যের দাম কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’

বাণিজ্য সচিব এসময় সাংবাদিকদের জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আগামী চার মাসের জন্য পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আশা করি, আগামী দুই একদিনের মধ্যে আমরা ফলাফল পাব।’রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্য সচিব জানান,আগামী এক মাসে চলমান দরেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে তারা ব্যবসায়ীদের বলেছেন। মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম এই পণ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি, যতটুকু পেঁয়াজ আমদানি করা হবে, ততটুকুর জন্যই দাম বাড়বে। ৮০ পারসেন্ট চাহিদা আমাদের দেশিয় পেঁয়াজ থেকেই মেটাতে হবে। সে হিসেবে দাম যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া এনবিআর, টিসিবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পেঁয়াজের পাশাপাশি এই সভায় ভোজ্য তেল, চিনি, ও মসুর ডালের মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

সভার শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এই চারটি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় পেঁয়াজ পরিবহনকারী ট্রাক চলাচলে যাতে জটলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন দুটি দল ঢাকাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাজার তদারক করবে। আর সারা দেশে জেলা উপজেলার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, টিসিবি সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতিদিন সারা দেশে ৪০০ ট্রাকে ৪০০ থেকে ১০০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে এ চাড়া ভারত ও তুরস্ক থেকে ১৫০০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আগামীনিউজ/শরিফ