নীলফামারীঃ জেলার সৈয়দপুরে রেমিটেন্স আয়কারি সম্ভাবনাময়ি শিল্প মহামারির ছোবলে বন্ধ হতে চলেছে। ধারদেনা করে পুঁজি বিনিয়োগ করেও শেষ রক্ষা মিলবে কিনা তা নিয়ে প্রচন্ড সংশয়ে আছে কর্তৃপক্ষ।
এমন অবস্থার শিকার হয়েছে বে-সরকারি সংস্থা নীল পল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতি পরিচালিত নীল পল্লী ক্রিয়েশন নামক শিল্পটি। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছে ৩ হাজার যুব মহিলা ও নারী। তারা সংসারের কাজের ফাকে বাড়িতে বসেই কাজ করে বাড়তি আয় করে স্বচ্ছলতা ফেরাতে অর্থের যোগান দেন। কোভিডের কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই কাজ হারিয়েছে। যারা খেয়ে না খেয়ে জড়িত আছে তারাও আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজ হারা হতে পারে।
নীল পল্লী ক্রিয়েশনের তৈরী পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও তুরস্কের বাজারে যেত। অনলাইনে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতেন। কিন্তু অতি মহামারির ছোবলে বিদেশি গ্রাহকরা পণ্য সরবরাহের কোন নির্দেশ দিচ্ছে না। ফলে তৈরীকৃত পণ্যের স্তুপ দিন দিন বাড়ছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিক কর্মচারি ও কারিগরদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্তা ব্যক্তিরা। একই সঙ্গে মোটা অংকের রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত থাকছে দেশ।
কথা হয় নীল পল্লী ক্রিয়েশনের কর্ণধার দেশের স্বনামধন্য নারী উদ্যোক্তা এমি বনলতার সঙ্গে। তিনি আগামী নিউজকে বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মোতাবেক পণ্য তৈরী করি। পণ্যের নকশায় বাংলাদেশের গ্রামবাংলার চিত্র যেমন ফুটিয়ে তোলা হয় তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও সুঁচের ডগায় তুলে আনার করা হয় চেষ্টা। আমাদের দেশের মানুষ বিদেশি পণ্য কিনে নিজেকে ধন্য মনে করে। কিন্তু আমাদের তৈরী পণ্য কিনে বিদেশিরাও নিজেকে গর্বিত মনে করবে। সেই চিন্তাকে ধারণ করেই নীল পল্লী ক্রিয়েশন পণ্য তৈরীর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে রপ্তানি আয় বাড়বে এবং সরকার প্রধানের বিদেশির মাটিতে বৃদ্ধি পাবে মর্যাদা।
এমি বনলতা বলেন পণ্যের নকশায় দেশপ্রেমের ছোঁয়া থাকে। যাতে মানুষের হৃদয়ে বাড়ে দেশভক্তি। নিজের অর্থ ব্যয় করে দুস্থ নারী ও বেকার যুব মহিলাদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য দেয়া হয়েছে তাদের হাতে কাজ। বিদেশের মাটিতে যত পণ্যের চাহিদা বাড়বে ততই আমরা অতি মানসম্পন্ন পণ্য তৈরী করে রপ্তানি করতে পারবো।
শুরুর দিকটা কষ্টের হলেও মাঝখানে আলোর দেখা মিলে। অথচ সব আশাই গুড়েবালি করে দিচ্ছে অতি মহামারি করোনা। তার মতে, করোনার ছোবল না দিলে আগামী ২০২৩ সালে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০ হাজার নারী ও বেকার যুব মহিলা নিজের পায়ে দাড়ানোর সুযোগ পেত। এতে করে সংসারের স্বচ্ছলতা আসতো, দেশের অর্থনীতির চাকা এগিয়ে যেত দুর্বার গতিতে।
নীল পল্লী ক্রিয়েশনের তৈরী পণ্যগুলো হলো কুর্তা, টপস্, নকশিকাথা, থ্রিপিছ, পাঞ্জাবি, নকশাকার শাড়ি, বেডসিট, বেবীফ্রক, ফতুয়া ও কাঠের গহনা। কর্ণধার এমি বনলতা বলেন, আগামী দিনে রেশমের কাপড় ও হারিয়ে যাওয়া মসলিন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। তবে সফলতা পেতে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন একান্তভাবে।
কথা হয়, নীল পল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান জয়িতা ও নারী উদ্যোক্তা কামরুন নাহার ইরার সঙ্গে। তিনি বলেন, সুখি সমৃদ্ধশালী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের প্রত্যয় নিয়ে নীল পল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতির যাত্রা শুরু হয়। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে এই সমিতির সদস্যদের গড়ে তোলা হয় কারিগরি শিক্ষায়। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে হাঁস, মুরগি, ছাগল ও গরুর খামার গড়ে তোলা হয় ৫০০’র উপরে।
কিন্তু করোনা শুরু হলে বাজারে পশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে খামারে শুরু হয় মন্দাভাব। আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। একই সঙ্গে আছে বাজার সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বাজারের নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে রাখে। এ জন্য উৎপাদক শ্রেণি দামে মার খায়। সে জন্য তিনি সমবায় ব্যবস্থা প্রচলনের দাবি জানান। একই সঙ্গে তার পরিচালিত নীল পল্লী মহিলা উন্নয়ন সমিতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনারও দাবি করেন তিনি।