বর্গাচাষিদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২, ২০২১, ১২:২১ এএম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচির কার্যকারিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য একটি সূচকের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যের হার, জনসংখ্যা, বেকারত্বের হার প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে বহুমাত্রিক মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণে বর্গাচাষিদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা।

গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘করোনা ও আম্পান মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা: সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব কথা বলা হয়। ডাক দিয়ে যাই, পিরোজপুর এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ সংলাপ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

সংলাপে বক্তারা বলেন, ত্রাণসেবা-সংক্রান্ত প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণসহ ত্রাণ কর্মসূচি কার্যকর করতে আরও পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে ‘আম্পানের’ মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তার অধিকতর কার্যকর ব্যবহার এবং অপচয় রোধে সারবীজের বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে এবং স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা ও ফসল উৎপাদনের বিন্যাস অনুযায়ী বরাদ্দ করতে হবে

তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা হালনাগাদ করে নতুনভাবে কৃষিকার্ড বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে। নিবিড় তদারকির ভিত্তিতে কৃষকের জন্য জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কৃষি সহায়তাগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষিকর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কৃষিঋণ বিতরণে বর্গাচাষি এবং ত্রাণ বিতরণে গ্রামে ফেরা মানুষের জন্য বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।

সংলাপে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত ও ডাক দিয়ে যাই, পিরোজপুরের নির্বাহী পরিচালক শাহজাহান গাজী সংলাপে বক্তব্য দেন।

সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ও সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মোস্তফা আমির সাব্বিহ সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় করোনা ও আম্পান মোকাবিলায় ত্রাণ ও কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ পরিলক্ষিত হয়েছে। বরাদ্দ ও বিতরণের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা, সেবা-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করা, স্থানীয় পর্যায়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া অংশগ্রহণমূলক করা, ভবিষ্যতে দুই হাজার ৫০০ টাকার মতো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এর অধিকতর কার্যকারিতার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়া বা সেবা পাওয়ার শর্তের ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প রাখাসহ আরও পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচিকে কার্যকর করতে পারে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইন্দুরকানী উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দুই হাজার ৫০০ টাকা মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য এমন চার হাজার জনের একটি তালিকা জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ এ সহায়তা পেয়েছেন। যারা তালিকাভুক্ত কিন্তু এখনও সহায়তা পাননি, তাদের কাছে দ্রুত নগদ সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথা বলেন।

সংলাপে জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জেলা প্রশাসকের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি বলেন, পিরোজপুর জেলায় সবার জন্য খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। আম্পান মোকাবিলায় তিনি বলেন, পিরোজপুরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সংলাপে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, জনগোষ্ঠীর ভিত্তির চেয়ে দারিদ্র্যভিত্তিক ও বিপন্নতাভিত্তিক ত্রাণ তৎপরতা অনেক বেশি কার্যকর হয়। এ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আরও তথ্য-উপাত্ত ও প্রশাসনিক সমন্বয় প্রয়োজন।

আগামীনিউজ/এএইচ