ঢাকাঃ সিঙ্গাপুরের বড় বড় প্রায় সব সুপারশপেই এখন পাওয়া যায় বাংলাদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত খাদ্যপণ্য। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে উৎপাদিত বেকারি পণ্য ব্রেড-বিস্কিট-কেক ও ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল দেশ থেকেই কিনে নিয়ে যেতে হতো বলে জানালেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশী আসিফ আহমেদ। শুধু বাংলাদেশী নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও সুপারশপগুলোতে এসব ব্র্যান্ডের পণ্য কিনছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে বেকারি পণ্য খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরেই ব্রেড-বিস্কিট-কেকসহ বেকারি পণ্যের বাজারের আকার এখন বেশ বড়। বছরে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার এই বাজারে স্কয়ার, প্রাণ, অলিম্পিক, ইফাদের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আছে মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উৎপাদিত বেকারি পণ্যের অধিকাংশ ভোক্তাই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের বাংলাদেশীরা। তবে গত পাঁচ বছরে অন্যান্য দেশের ভোক্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের ব্রেড-বিস্কিট-কেক ও ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল পণ্য।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদিত ব্রেড-বিস্কিট-কেক ও ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল জাতীয় খাদ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সরকারি তথ্য-উপাত্তেও। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার ডলারের ব্রেড-বিস্কিট-কেক, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল জাতীয় খাদ্যপণ্যের রফতানি হয়েছে বিশ্ববাজারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ২৮ শতাংশ। ওই বছর রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ডলারের।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ব্রেড-বিস্কিট-কেক পণ্যের চাহিদা বাড়ন্তই ছিল। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজার পর্যায়ক্রমে অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় রফতানির গতি বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে রফতানি বাড়লেও তার হার আগের চেয়ে কমেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, ব্রেড-বিস্কিট-কেক জাতীয় বেকারি পণ্য রফতানির উল্লেখযোগ্য গন্তব্যগুলোর মধ্যে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য। এই দেশগুলোসহ ৭৫টিরও বেশি দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্রেড-বিস্কিট-কেক ও ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৪১ হাজার ডলারের। এ হিসেবে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ অটো বিস্কিটস অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান ভুইয়া বলেন, কূটনৈতিক ব্যক্তিরাসহ বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিদেশী কর্মরত আছেন। এ ধরনের ভোক্তাদের একটি অংশের জন্য ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, ব্রেড-বিস্কিট-কেক জাতীয় সুনির্দিষ্ট কিছু বেকারি পণ্যের আমদানিও হয় বাংলাদেশে। তবে সেটা খুবই নগণ্য। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পণ্যগুলোর বাজারের আকার বার্ষিক আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার। এ বাজারে পণ্যগুলোর প্রধান সরবরাহকারী স্থানীয় উৎপাদকরাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাইরেও রয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী। বাংলাদেশীরা এসব পণ্যের মূল ক্রেতা হলেও এখন এতে পরিবর্তন আসছে। করোনার মধ্যেও পণ্যগুলোর রফতানি ব্যাহত হয়েছে তুলনামূলক কম।
রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, করোনার মধ্যেও ব্রেড-বিস্কিট-কেক, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল জাতীয় খাদ্যপণ্যের রফতানি ভালোই ছিল, কিছু কিছু জায়গায় শিপমেন্ট সাময়িক সময়ের জন্য সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। যেমন ভারতে রফতানি করার ক্ষেত্রে বেশ ঝঞ্ঝাটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ বর্ডার বন্ধ ছিল। আবার লকডাউনে রফতানি গন্তব্যগুলোর দোকানপাটও বন্ধ ছিল। তবে এত কিছুর মধ্যে রফতানি চাহিদা খারাপ ছিল না। কভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় এ চাহিদা বেশ ভালো ছিল বলা যায়। বিশেষ করে ফুড ও ফুড সাপ্লিমেন্ট পণ্যের চাহিদা জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বেড়েছে। তবে চাহিদা বাড়লেও পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে এ সময়ে।
জানতে চাইলে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামাল কামরুজ্জামান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও কানাডা, ইউরোপের ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে অর্থাৎ যেসব জায়গায় বাংলাদেশী ও ভারতীয়দের বসবাস রয়েছে, সেগুলোতেই যায় আমাদের চানাচুর মুড়ির মতো বিভিন্ন পণ্য। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় সব দেশেই এসব পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র; বণিক বার্তা
আগামীনিউজ/এএইচ