দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও (২ জুলাই) কোনো পণ্য আমদানি হয়নি বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল বন্দরে তিন মাসের অধিক সময় ধরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির দাবিতে এ এলাকার রপ্তানিকারক সমিতি একজোট হয়ে বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে এ পথে আমদানি বন্ধ করে দেয়।
তবে বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় সহস্রাধিক পণ্য বোঝায় ট্রাক আটকা পড়েছে দুই দেশের বন্দরে। ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা চাচ্ছে আমদানি হলে রপ্তানি হতে বাধা কোথায়। যে প্রক্রিয়ায় আমদানি হচ্ছে একই প্রক্রিয়ায় রপ্তানিও চলুক।
করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় ‘নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে গত ২২ মার্চ থেকে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে কোনো রপ্তানি পণ্য গ্রহণ করছে না। তবে ৭ জুন থেকে ভারত বেনাপোল বন্দরে আমদানি চালু করলেও রপ্তানি পণ্য নিচ্ছে না। ফলে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানি। বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। বৈদেশিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। দেশে স্থলপথে যে রপ্তানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৯ হাজার টন বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। ফলে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতীয় চালকেরা পণ্য নিয়ে বেনাপোলে ঢুকতে পারলে বাংলাদেশি চালকেরা কেন পেট্রাপোলে বন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না? তাদের দাবি বেনাপোল বন্দর এলাকা এখন করোনামুক্ত, গ্রিন জোনে রয়েছে। ফলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ট্রাক চালকেরা সুরক্ষা পোশাক পরেই ভারতে যাবেন এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোনো কথার কর্ণপাত করছে না ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল থেকে পেট্রাপোলে ট্রাক প্রবেশের সবুজ সঙ্কেত না মেলা পর্যন্ত ভারতের ট্রাককে ও বেনাপোল বন্দরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলছেন, করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য গ্রহণ করছে না। ফলে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে গেলেও রপ্তানি হয়নি কিছুই। এমনিতেই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। একতরফাভাবে রপ্তানি আটকে রাখায় এই ঘাটতি আরো বাড়ছে।
‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা বহু দেন-দরবার করেও বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে বুধবার সকাল থেকে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেন ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল হক।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরাও চাইছেন, বেনাপোল থেকে পণ্য আমদানি শুরু হোক।
পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস জানান, বেনাপোল থেকে পণ্য রপ্তানির কাজ এই মুহুর্তেই শুরু হোক। না হলে বহু ব্যবসায়ী এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও। স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ শুরু হোক দ্রæত, দু’পারের অসংখ্য মজদুরও আর্থিক সংকটে ধুকছেন, তাদের কথাও ভারত সরকারকে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
ভারতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহন দফতরের রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি সাবেক বিধায়ক গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য আমদানি শুরু করার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে তিনি চিঠি দিয়েছেন।
পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বেনাপোলের বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
দু’দেশের কর্তৃপক্ষের কাছেই আমাদের এ্যাসোসিয়শনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য ফের সচল করতে হবে।
পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির ম্যানেজার শুভজিৎ মন্ডল বলেন, বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য আমদানির কাজ শুরু করার জন্য রাজ্যে সরকারের প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা আসেনি। রাজ্যের কোনো স্থলবন্দর থেকেই পণ্য আমদানির জন্য রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি এখনও পর্যন্ত। নির্দেশিকা এলেই বেনাপোল বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক গ্রহণ করতে কোন বাধা থাকবে না।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর খোলা আছে। বাণিজ্য সচলের জন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামীনিউজ/মনির/জেএফএস