ঢাকা : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকীতে সরকারের কাছে সকল প্রকার অর্থায়ন ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (১৬ মার্চ) এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সংস্থাটি। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে বর্ষব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ছিলো জাতিগত নিপীড়ন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক শোষণ, দুর্নীতি, অনিয়ম, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণসহ সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
এতে বলা হয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত জোরালোভাবে স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতি পরায়ণতায় উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। দুর্নীতিবাজদের কখনো চাটার দল আখ্যায়িত করেছেন, কখনো বা তুলনা করেছেন জানোয়ারের সঙ্গে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটে সরকারেরপাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছিলেন। পঁচাত্তরের স্বাধীনতা দিবসে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-
‘...আজকে আমার একমাত্র অনুরোধ আপনাদের কাছে, সেটা হল এই আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে , জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে এক নম্বর কাজ করতে হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে।... আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে? আইন চালাবো। ক্ষমা করব না। যাকে পাব ছাড়ব না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণআন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামবো।...আপনাদের গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে পারে কে? ছাত্র ভাইয়েরা পারে, পারে কে? যুবক ভাইয়েরা পারে, পারে কে? বুদ্ধিজীবীরা পারে, পারে কে? জনগণ পারে, আপনারা সঙ্গবদ্ধ হন, ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করার জন্য। বাংলাদেশের দুখী মানুষের দু:খ মোচন করার জন্য।’
জাতির পিতা এভাবেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর কৌশল ও দিক নির্দেশনা রেখে গেছেন উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তাঁর জন্মশত বার্ষিকীতে দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত এক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘জাতির জনকের আহ্বানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে এই প্রত্যয়ে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকল অংশীজনের প্রতি মুজিব বর্ষের সকল কার্যক্রমে অর্থায়ন ও আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
এতে জানানো হয়, রাষ্ট্র কাঠামো ও রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনার মূলধারায় দুর্নীতির প্রতি ‘শূন্য সহনশীলতা’ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, এবং রাজনীতি ও রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও অবৈধ অর্থের প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
এছাড়া মুজিববর্ষের উদযাপনকে কেন্দ্র করে সরকারিভাবে ব্যয়িত সকল অর্থায়ন, অর্থের ব্যবহার এবং আর্থিক লেনদেনের তথ্য ওয়েবসাইট ও জনগণের জন্য সহজে অভিগম্য অন্যান্য মাধ্যমে স্বপ্রণোদিত প্রকাশসহ সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইতোমধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ব্যয়িত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্পৃক্ত সকল আয়-ব্যয় ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে । মুজিববর্ষ উদযাপন জাতির পিতার অবদানের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও মর্যাদার এক মহান উপলক্ষ্য, তাঁর স্মৃতি ও অবদানের জন্য অমর্যাদাকর হতে পারে এমন সকল সম্ভাবনা প্রতিহত করতে হবে।
আগামীনিউজ/মিঠু/সুমন/হাসি