পেনশন আদেশ সহজ করতে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতির প্রবর্তন

আমির হামযা ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০, ১২:৩৫ পিএম

ঢাকা : অবসর যাওয়া সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গের অবসরজনিত সুবিধাদি সঠিক সময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি অবসর গ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জারিকৃত পরিপত্র ‘বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের পেনশন মঞ্জুরি ও পরিশোধ সংক্রান্ত বিধি বা পদ্ধতি অধিকতর সহজীকরণ আদেশ, ২০০৯’ আদেশ দ্বারা প্রতিস্থাপন করবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা ‘সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০’ নামে অভিহিত হবে।

ছুটি নগদায়ন মঞ্জুরীর আদেশ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বিল দাখিল করিবেন। ছুটি নগদায়ন  সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থাৎ ছুটি নগদায়ন অর্থের চেক হিসাবরক্ষণ অফিস বিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে অবসরে গমনের পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ নিশ্চিত করবে সরকার।

পেনশন মঞ্জুরির কাগজপত্র প্রাপ্তির ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (পিপিও) ফরম জারি করবে। আনুতোষিকের টাকার চেক বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) নোটিশ অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শেষ হওয়ার পর দিন বা চূড়ান্ত অবসরগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর কাছে অথবা ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। পেনশন সংক্রান্ত সকল ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বদলিতে এলপিসি ইলেক্ট্রনিক্যালি পূরণ করতে হবে এবং অনলাইনে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। অনুতোষিত পেনশন এবং বকেয়া পেনশনের ক্ষেত্রে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, ইএফটি জেনারেট করতে হবে। অডিট আপত্তি থাকলে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। চূড়ান্ত অবসর গ্রহণের এক বৎসরের মধ্যে বিভাগীয় মামলা থাকলে নিষ্পত্তি করতে হবে।

পারিবারিক পেনশনের ক্ষেত্রে পুত্র সন্তানের বয়সসীমা হইবে ২৫ বৎসর। চলতি বিধানের সেই সকল ক্ষেত্রে পুত্র সন্তানের কোন বয়সসীমা বর্তমানে উল্লেখ নাই, সেই সকল ক্ষেত্রে বয়স নির্বিশেষে সকল পুত্র সন্তান পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হইবেন। পারিবারিক পেনশন প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে তৎকালীন অর্থ ও রাজস্ব বিভাগের ১৫ বৎসরের মেয়াদকাল পূর্তির কোন সময় অবশিষ্ট থাকলে শুধু উক্ত সময় পূর্তি পর্যন্ত।

তিনি পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। ২৫ বৎসরের ঊর্ধ্বে পুত্র সন্তানের প্রাপ্যতার অনুরূপ শর্তে মৃত সরকারি কর্মচারীর। বিবাহিতা কন্যা বা কন্যারা প্রচলিত বিধিগত পদ্ধতিতে ও হারে পেনশন বা আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন। নতুন পেনশন আদেশের অবিবাহিতা বা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত কন্যার বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ।

পেনশনারের অবসরগ্রহণের তারিখ হতে মোট ১৫ বৎসর মেয়াদকাল পূর্তির কোন সময় অবশিষ্ট থাকিলে উক্ত অবশিষ্ট সময়ের জন্য অবিবাহিতা বা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত কন্যা বয়স নির্বিশেষে পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। অবসরগ্রহণের পরে মৃত্যুর ক্ষেত্রে পারিবারিক পেনশনের হারও নির্ধারণ করা হয়েছে।

একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর মৃত্যুবরণ করলে, তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে হারে পেনশন প্রাপ্য হতে তার মৃত্যুর পর তার পরিবার বা মনোনীত উত্তরাধিকারী একই হারে পরিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। আত্মহত্যার কারণে মৃত কর্মচারীর পরিবারকে (যদি থাকে) স্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যায় প্রচলিত বিধি অনুযায়ী পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান করতে হবে।

বিতর্কিত চাকরিকাল বাদ দিয়ে অবশিষ্ট পেনশনযোগ্য চাকরি ২৫ বৎসর অথবা তদুর্ধো ক্ষেত্রে পূর্ণ হারে পেনশন মঞ্জুর করতে হবে। বিতর্কিত চাকরিকালের কারণে পেনশন মঞ্জুরিতে দেরি করা যাবে না।

সরকার নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পেনশন মঞ্জুরি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বা পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ মননোনীত কল্যাণ কর্মকর্তার মাধ্যমে এবং যথাসময়ে পিপিও ইস্যু করা হয়েছে কিনা তা হিসাবরক্ষণ অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং করে পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করবে।

নতুন আদেশে সাময়িক পেনশন প্রদান করবে সরকার। যে সকল পেনশন কেইস না-দাবী প্রত্যয়নপত্র অথবা অন্যান্য প্রয়োনীয় কাগজপত্রাদির অভাবে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না সেই সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর উপযুক্ত উত্তরাধিকারীর আবেদনক্রমে প্রাপ্য আনুতোষিকের শতকরা ৮০ ভাগ এবং পেনশন সাময়িকভাবে প্রদান করতে হবে। পরবর্তীকালে কমপক্ষে ৬ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিস প্রযোজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করে পেনশন কেইসটি ‍চূড়ান্ত করতে। অন্যথায় উক্ত ৬ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার অব্যবহিত পর সাময়িকভাবে প্রদত্ত নিট পেনশন, পেনশনারের নিজস্ব বিবরণীর ভিত্তিতে চূড়ান্ত করতে হবে এবং আনুতোষিকের বাকী অংশ পরিশোধ করতে হবে। তবে অডিট আপত্তি থাকলে তা এই আদেশ অনুযায়ী নিস্পত্তি করতে হবে।

নতুন আদেশ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীগণ গ্রস পেনশনের শতকরা ৫০ ভাগ বাধ্যতামূলক সমর্পণ করবেন এবং অবশিষ্ট শতকরা ৫০ ভাগের জন্য নির্ধারিত হারে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। এছাড়া পেনশনাররা বা পারিবারিক পেনশনারগণ মাসিক পেনশনের উপর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন।

নতুন আদেশে পেনশন পুনঃস্থাপন করা যাবে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীগণের অবসর গ্রহণের তারিখ হতে ১৫ বৎসর সময় অতিক্রান্তের পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে। কর্মচারীর এলপিআর/পিআরএল যে তারিখে শেষ হয়েছে তারপর দিন হতে উক্ত ১৫ বৎসর সময়। গণনা করা হবে। আর যিনি পিআরএল ভোগ করেন নাই তার ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের তারিখ হতে উক্ত ১৫ বৎসর সময় শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর পেনশন পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্মীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান যদি থাকে আজীবন পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

আদেশে বলা হয়েছে চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হবে। পেনশনার বা শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী পুনঃস্থাপিত পেনশনার বা পরিবার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) মাসিক পেনশনের পাশাপাশি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

নতুন পেনশন আদেশে কিছু ফরমে পরিবর্তন আনা হয়েছে, ব্যাংক বা ইএফটি সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রতি মাসের পেনশন পরবর্তী মাসের ০১ তারিখে পেনশনারের ইএফটি এর মাধ্যমে তাহার ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করতে হবে।

আগামীনিউজ/ আমির/সবুজ