হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের শীতল পাটি

নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ১১:২৭ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: গ্রীষ্মের দুপুরে বাড়ির পাশের বাগানে শীতলপাটিতে পিঠ এলিয়ে একটুখানি স্বস্থির কথা গত শতাব্দির শেষাংশে জন্মগ্রহণ করাদের অবশ্যই জানা আছে। শীতলপাটি গ্রাম-বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। গ্রাম কিংবা শহরের সৌখিন মানুষদের কাছে শীতলপাটির কদর অনেক। তবে বর্তমানে উন্নতমানের মাদুর ও প্লাস্টিকের রেক্সিন আবিষ্কারের কারণে হ্রাস পেয়েছে শীতল পাটির মূল্য ও উৎপাদন। এছাড়াও শীতলপাটি তৈরির কাঁচামালের দাম অনেক। এসব নানা কারণে এখন বিলুপ্তির পথে হাজার বছরের এ ঐতিহ্য ও হস্তশিল্প।

শীতলপাটি বুননের কাঁচামাল হচ্ছে মুরতা বেত, চট্টগ্রামের ভাষায় যাকে বলা হয় পাটিবেত বা পাটিবাতা। যা শুষ্ক মৌসুমে রোপণ করা হয়। বেত পরিপক্ব হলে বর্ষার পানিতে ভিজিয়ে পাটি তৈরির উপযোগী বেতে পরিনত করা হয়। এরপর চলে পাটি বুনন। এখনো গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে কনের সঙ্গে শীতলপাটির উপহার ধরাবাঁধা নিয়ম হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বেতের তৈরি নামাজের মুসল্লা বা মাদুরেরও রয়েছে সমান কদর। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে শীতলপাটির স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল, নানুপুর, ধুরুং, দাঁতমারাসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে মুরতা বা পাটিবেতের অস্থিত্ব থাকলেও নানা কারণে শিল্পটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গৃহায়ন বেড়ে যাওয়ায় উজাড় হচ্ছে বেতবন।

এছাড়াও একটি চার হাত বাই পাঁচ হাত পাটি তৈরিতে কমপক্ষে ১৫০টি মুরতা বেতের প্রয়োজন পড়ে। যার বাজার মূল্য এক সময় ৫০০ থেকে নিয়ে ৮০০ টাকা ছিল। যা এখন কিনতে হচ্ছে এক থেকে দুই  হাজার টাকায়। এছাড়াও বর্তমানে উন্নতমানের মাদুর ও প্লাস্টিকের রেক্সিন আবিষ্কারের কারণে হ্রাস পেয়েছে শীতলপাটির মূল্য ও উৎপাদন।

ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল গ্রামের দিপালি দেবী বলেন, আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর আগের প্রত্যেকটি ঘরের গৃহিনীরা ভাত রান্নার মতো করে পাটি বুননের কাজ জানতো। কিন্তু রেক্সিন ও প্লাস্টিকের মাদুর আবিস্কার এবং ফেসবুক-অনলাইনের অসক্তির ফলে এখনকার মেয়েরা পাটি বানাতে জানে না।

ফটিকছড়ি সদর বিবিরহাট বাজারের বেতশিল্প ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘর বৃদ্ধি পাওয়ায় উজাড় হচ্ছে বেতবন। ফলে কাঁচামালের বিলুপ্তি ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী ও বুনন শিল্পীরা এ শিল্প রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।