টাঙ্গাইলঃ যমুনা, ধলেশ্বরী, বংশী ধলেশ্বরী, ঝিনাই, বংশী, লৌহজং, সাঙ্গুনিয়া, এলংজানী, ফটিকজানী, যুগনী নদীবিধৌত শহর টাঙ্গাইল। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর শিল্প সংস্কৃতির সুনামও জগতজোড়া। অনেক কৃতী পুরুষেরও জন্ম এখানে- যারা বিভিন্ন সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। টাঙ্গাইলের শাড়ি এক সময় বিখ্যাত ছিল দেশ-বিদেশে, যা আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এই টাঙ্গাইলের একটি গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুঘল আমলের তৈরি আতিয়া জামে মসজিদ। ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান ও প্রত্নসম্পদ।
এই জেলার অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মধুপুর গড়, ছয়আনা রাজবাড়ী, সন্তোষ জমিদারবাড়ি, সাগরদীঘি, ঘাটাইল, এলেঙ্গা রিসোর্ট, যমুনা রিসোর্ট, নাগরপুর জমিদার বাড়ি, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, আতিয়া মসজিদ, করটিয়া জমিদার বাড়ি, মহেরা জমিদার বাড়ি, দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি, ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি, নওয়াব শাহি জামে মসজিদ, পাকুল্লা জামিদার বাড়ি। আর রাবার বাগানের কথা না বললেই নয়, কাঁচা সবুজ রঙের পাতা। সুউচ্চ বৃক্ষের সারি। যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। চারদিকে সবুজের সমারোহ। দেখলেই মন ভরে যায়। মধুপুরের পীরগাছা রাবার বাগানের এই সৌন্দর্য অকৃত্রিম। দুই ধারে হাজারো গাছ আর এরই মাঝখানে সুবিশাল পথ। পথ চলতে চলতে মনে হয়, এই পথ যদি শেষ না হতো! এতো বৈচিত্র্যের মাঝে আরো বৈচিত্র্যময় হলো নানা ভাষাভাষির প্রায় ২০ হাজার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত সহাবস্থান। কিন্তু এতসব সম্মিলিত বৈচিত্র্যের মাঝে সব সুন্দর যেন ম্লান করে দিয়েছে করোনা!
সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে প্রায় ২ শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে প্রায় ২ হাজারের মতো সংস্কৃতি কর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিক আদিবাসী সংস্কৃতি কর্মীই রয়েছে। সমতলের সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে ৯০ জনকে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হলেও আদিবাসী সংস্কৃতি কর্মীদের ভাগ্যে কোনো সরকারি প্রণোদনাই জোটেনি। নিরুপায় হয়ে এসব শিল্পীরা কলা বাগানে, আনারস বাগানে, ধানখেতে দিনমজুরি করছেন। সরকারি প্রণোদনা থেকে উপেক্ষিত ও বৈষম্যের শিকার আদিবাসী সংস্কৃতি কর্মীদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নখরেখ বলেন, আদিবাসীরা এমনিতেই এক ধরনের সংখ্যালঘু। করোনাকালে তাদের অবস্থা আরো প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারি প্রণোদনা সমতলের শিল্পীরা পেলেও এদিকের শিল্পীরা উপেক্ষিতই থেকে গেল। অনন্যোপায় হয়ে কেউ কেউ কলাবাগানে, আনারস বাগানে, ধানখেতে দিনমজুরের কাজ করছে।
নাট্যশিল্পী ও সংগঠক রতন দত্ত বলেন, করোনায় ঝিমিয়ে পড়েছে পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সেই সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে এর সঙ্গে জড়িতদের জীবন। যারা সংগীত, নৃত্য, তবলার শিক্ষকতা করছেন তারা বিপদে পড়ে গেছে। এমন নাজুক পরিস্থিতি থাকলে শিল্পচর্চা করতে আসবে না শিল্পীরা। সরকারি প্রণোদনাও অপ্রতুল।
গণসংগীতশিল্পী অ্যালেন মল্লিক বলেন, এখন কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় এর সঙ্গে জড়িতরা বেকারত্বের বোঝা টানছেন।
নৃত্যগুরু হারুনর রশীদ বলেন, অন্য জেলার চাইলে আমাদের এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি। কারো কাছে হাত পাততেও পারছি না। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ৬ মাস ধরে আমার নাচের স্কুল বন্ধ যেটা আমার একমাত্র আয়ের পথ। এভাবে চলতে থাকলে সংস্কৃতি চর্চাও হয়তো আর করতে পারব না। শিল্পীদের বাঁচিয়ে না রাখলে সমাজটা তো কলুষিত হয়ে পড়বে।
সংস্কৃতি কর্মী ও সাংবাদিক কামনাশীষ শেখর বলেন, সংস্কৃতি শিল্পীরা কোনো রকমে টিকে আছে। বিশেষ করে শহরকেন্দ্রিক যারা সংস্কৃতি চর্চা করেন তারা ঋণ করে, সঞ্চয় ভেঙে চলছেন।
আগামীনিউজ/আশা