ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার  ঋণ বিতরণে বিসিকের  ১৬ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৮, ২০২০, ০৭:২১ পিএম

ঢাকা: দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বিতরণে সুপারিশমালা প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ।  

শনিবার ১৮ এপ্রিল বিসিকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। 
     
ইতিমধ্যে এ সুপারিশমালা প্রস্তাবনা আকারে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।  এগুলো হলো- 

১.কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ এর সংজ্ঞা অনুসরণ করা;

২.জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ এ উল্লিখিত উচ্চ অগ্রাধিকার, অগ্রাধিকার, সেবা এবং কৃষিভিত্তিক কর্মকান্ড ও কৃষিপণ্য/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতের উদ্যোক্তাসহ অন্যান্য অপ্রচলিত খাতের উদ্যোক্তাদের বিবেচনায় আনা যেতে পারে ।

৩.ঋণ প্রদানের জন্য একটি সহজবোধ্য গাইডলাইন প্রণয়ন করা যেতে পারে ;

৪. কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদেরকে সহায়ক জামানতের পরিবর্তে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং গ্রুপ গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জামানত ব্যতিরেকে সহজ শর্তে শুধুমাত্র একটি ইউনিফর্ম আবেদনের মাধ্যমে এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করা যেতে পারে;

৫.নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে;

৬.ছয় মাস বা এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৫ বছর মেয়াদে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে;

৭.বিদ্যমান ঋণ গ্রহিতা উদ্যোক্তাদেরকে তাদের স্ব স্ব ব্যাংক থেকে বর্তমান ঋণ সুবিধার পাশাপাশি এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করা যেতে পারে ;

৮.বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে জারিকৃত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) অর্থায়ন সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলার এর আলোকে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ ঋণের সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে;

৯.আলোচ্য ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) অর্থায়ন সংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলারে উল্লিখিত স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কীম এর আলোকে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাস্তবায়ন করা যেতে পারে ;

১০.ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির (MRA) অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ঋণ বিতরন করা যেতে পারে ;

১১.যেসকল সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের বিধিবিধানের মধ্যে থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে ঋণ বিতরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিসিক, পিকেএসএফ, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন, সমবায় অধিদপ্তর, এসএমই ফাউন্ডেশন, এসডিএফ এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য;

১২.বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত শিল্প ইউনিটসমূহ, লবণ চাষী এবং লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ মিলসমূহ, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ, জামদানি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ, মৌ-চাষীগণ, হালকা প্রকৌশল শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্লাস্টিক শিল্প প্রতিষ্ঠান, মুদ্রণ শিল্প প্রতিষ্ঠান, সাব-কন্ট্রাকটিং তালিকাভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, কৃষিভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং বিসিক কর্তৃক নিবন্ধিত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি লাঘবে বিসিক ও শিল্প মালিক সমিতির যৌথ সুপারিশের ভিত্তিতে প্রনোদনা প্যাকেজ অনুযায়ী এসকল শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করা যেতে পারে; 

১৩.বিসিক শিল্পনগরী বহির্ভূত দেশের বিভিন্ন বিভাগ/জেলা/উপজেলায় স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসন, বিসিক, নাসিব,   অ্যাসোসিয়েশন/চেম্বার এর যৌথ তালিকা ও সুপারিশের ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে ;


১৪.প্রতিটি জেলার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক (সরকারি ও বেসরকারি) এর মধ্য থেকে একটি ব্যাংককে এসএমই লিড ব্যাংক হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে এসএমই ঋণ পরিকল্পনার বিষয়ে নির্ধারিত জেলার ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য লীড ব্যাংক কনসোর্টিয়াসম লিডার হিসেবে কাজ করবে;

১৫.প্রনোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নের্তৃত্বে বিসিকের সাচিবিক সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক, এফবিসিসিআই, নাসিব, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে একটি যাচাই-বাছাই ও বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে;

১৬.জেলা পর্যায়ে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নের্তৃত্বে সকল ব্যাংকের জেলা প্রধান, বিসিক, নাসিব, জেলা চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা যেতে পারে ।

উল্লেখ্য,   গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ৫টি ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেন যার মধ্যে  প্যাকেজ-২ এর আওতায় ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মোট ২০,০০০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। 

আগামী নিউজ/ তরিকুল/ তাওসিফ