মাগুরার চাঞ্চল্যকর আজিজুর হত্যার দায় স্বীকার

মোখলেছুর রহমান, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি জুন ১৬, ২০২১, ০৮:৫৪ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

মাগুরাঃ চাঞ্চল্যকর আজিজুর হত্যা মামলায় বুধবার (১৬ জুন) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে হত্যা মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত আশরাফ হোসেন। বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত এ জবানবন্দী রেকর্ড করেন
বিজ্ঞ বিচারিক ম্যাজিট্রেট-১ মোস্তফা পারভেজ। পরে তাকে মাগুরা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। 

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাগুরা সিআইডি’র পরিদর্শক নিকুঞ্জ কুমার কুন্ডু জানান, আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আশরাফ। নিকুঞ্জ কুমার কুন্ডুর সাথে আলাপকালে জানা গেছে, আশরাফ গত ৫ জুন ঘটনার দিন
নিহত আজিজুরকে মাগুরা শহরতলীর বেলতলায় আশরাফের হোমিওপ্যাথীর দোকানে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর ৩ হাজার টাকার একটি বকেয়া টাকা নিয়ে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আশরাফ আজিজুরকে সজোরে চপেটাঘাত সে মারা যায়। আকস্মিক এ মৃত্যুতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আশরাফ। এ সময় সে তার হোমিওপ্যাথীর দোকানে নিহত আজিজুরকে আটকে রেখে শহরে আসে। তারপর শহরে এসে একটি ধারালো অস্ত্র কিনে নিয়ে আবার দোকানে ফিরে যায়। 

নিহত আজিজের লাশ এককভাবে বহন করা সম্ভব নয় ভেবে আশরাফ এটিকে খন্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর মাথা ও একটি পা বিচ্ছিন্ন করে ৬ টুকরা করে ভালোভাবে প্যাকেটজাত অবস্থায় সদর উপজেলার জগদল এলাকার একটি কালভার্টের মধ্যে ফেলে। শরীরের বাকি অংশ বস্তাবন্দী ক’রে মটর সাইকেলযোগে মহম্মদপুরের কালুকান্দি গ্রামে নিয়ে একটি পুকুরে ফেলে দেয়। আশরাফ এ কাজটি একাই করেছে বলে দাবি করেছে তার জবানবন্দীতে। 

এদিকে আশরাফের জবানবন্দী দেবার সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন আশরাফের স্ত্রী ইতি খাতুন, বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক, দুই শিশু পুত্র সাদ ও ইউসুফ। 

আশরাফের ভাই আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, আমরা এ ধরণের ঘটনায় একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছি। সে কেন এটি করতে গেল বুঝতে পারছি না। একজন মুসলিম একজন মুসলিমের বিপদে এগিয়ে আসবে এটাই ধর্মের শিক্ষা। সেখানে এভাবে কাউকে হত্যা করা অবশ্যই জঘন্য অপরাধ। 

আব্দুর রাজ্জাক জানান, তাদের ৮ ভাই বোনের মধ্যে আশরাফ ৫ম। সে তাবলিগ জামাতের সদস্য। সে কিভাবে এরকম একটি নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটালো কিছুতেই বুঝতে পারছেন তারা। 

এদিকে নিহত আজিজুরের শ্বশুরবাড়ি মাগুরা সদর উপলোর ইছাখাদায় গিয়ে দেখা গেছে, শোকে স্তব্ধ গোটা পরিবার। ছেলে বেলায় মা-বাবা হারানো আজিজুর বিয়ের পর স্ত্রী সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতো। চাকরি করতো একটি ওষুধ কোম্পানীতে। আজিজুরের শ্বশুর আলমাস শেখ ইছাখাদার একটি কাঠ চেরাই কলে শ্রমিকের কাজ করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। মেয়ে আফরোজার সাথে আজিজুরের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর আগে। তাদের ২ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সংসারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ছিল। কিন্তু আজিজুর ও আফরোজার দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। তাছাড়া আজিজুর ছিল সংসারের প্রধানতম অবলম্বন। আজিজুরের মৃতুতে গোটা পরিবার এখন নিঃস্ব। আজিজুরের স্ত্রী আফরোজা খাতুন স্বামী হত্যাকারী আশরাফের ফাঁসি দাবি করেন। 

প্রসঙ্গত, আজিজুর রহমান (৩০) মাগুরা সদর উপজেলার সংকোচখালি গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে। ছোটবেলায় তার বাবা মা মারার যাওয়ার পর থেকেই বিনোদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবহু গ্রামে তার নানা আবুল কাশেমের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছে। সে ঢাকার একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত ৫ জুন আজিজুর সকালে বাসা থেকে যশোরের উদ্যেশে রওনা হন। দুপুর ১২ টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৬ জুন সকালে কালুকান্দি গ্রামের মতিয়ার মোল্যা পুকুরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত একটি বস্তা দেখে পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বস্তাটি উদ্ধার করলে তার ভিতর মাথা ও একটি পা বিহীন লাশ পাওয়া যায়। পরে লাশের পরিহিত পোশাক দেখে এটি আজিজুর রহমানের মরদেহ বলে দাবি করে তার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান। ওই দিন হাবিবুর রহমান মহম্মদপুর থানায় বাদী হয়ে হত্যা ও গুমের অভিযোগ একটি মামলা দায়ের করে। গত ১৪ জুন র‌্যাব আশরাফকে যশোরের শার্শা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৪ জুন সন্ধ্যায় সদরের জগদল এলাকার একটি কালর্ভাটের ভিতর থেকে আজিজুরের একটি পা ও মাথা উদ্ধার করে। পরে মামলাটি সিআইডি’র উপর তদন্ত ভার দেয়া হয়।