ঢাকাঃ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বল্প মূল্যে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নুরজাহান অর্থপেডিক্স হাসপাতালে নিয়ে আসতো একটি চক্র। অথচ হাসপাতালটি এতটাই অপরিষ্কার যে ফ্লোরে রক্ত মাখা কাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
এমনকি রোগীর অস্ত্রোপচার করতেন হাসপাতালটির ওয়ার্ডবয় জাহাঙ্গীর হোসেন।
এসব অভিযোগে জাহাঙ্গীর হোসেনকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও হাসপাতালটির পরিচালক বাবুর হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাতভর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায় তিনটি হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সহায়তা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র্যাব-২।
পলাশ কুমার বসু বলেন, রাজধানীর শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর থানার বাবর রোডে হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসার আশ্বাসে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনে দালাল সিন্ডিকেট। তারা রোগী আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া।
অভিযানে নুরজাহান অর্থপেডিক্স হাসপাতালে নোংরা পরিবেশ ও ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর অভিযোগে হাসপাতালটির পরিচালক বাবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ওয়ার্ডবয় জাহাঙ্গীরকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযান শেষে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন পাশ করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। অথচ তিনি একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রোগীদের ভাঙা হাত-পায়ের এক্স-রে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিতেন। এমনকি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদণ্ড ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
অভিযানের শুরুতেই রাজধানীর মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। সেখানকার পরিচালক নূর নবীরও কোনো ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার সনদ বা অনুমোদন নেই। অথচ তিনি রোগী দেখছেন এবং তাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। হাত-পা ভাঙাসহ বিভিন্ন গুরুতর আহত যে রোগীরা আসছেন, তাদের অপারেশনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
এ অপরাধে হাসপাতালটির পরিচালক নূর নবীকে এক বছরের কারাদণ্ডসহ আনোয়ার হোসেন কালু ও তার সহযোগী আব্দুর রশিদকে ছয়মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মক্কা-মদিনা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
পলাশ কুমার বসু বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে। তারা বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তারাই বেশি এসব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন।
আগামীনিউজ/জেহিন