ফিল্মি স্টাইলে গার্মেন্টসের অর্থলুট, কর্মী সেজে তথ্য পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৪, ২০২০, ০৮:২২ পিএম
আটককৃত ডাকাত দল

ঢাকা: মাত্র ৫-১০ মিনিটের ফিল্মি স্টাইলের অপারেশন। এর মধ্যেই পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় ডাকাত দল। দীর্ঘ দিনের সাজানো নিখুঁত পরিকল্পনায় তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কর্মী বেশে ডাকাত দলেরই একজন!গত ৭ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস্ লিমিটেড গার্মেন্টসেরর মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।এ ঘটনায় রোববার (১৪ জুন) ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।আটকরা হলেন- রিয়াজ (৩৬), সাগর মাহমুদ (৪০), জলিল (৪০), ইসমাইল হোসেন মামুন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু (৪১)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ১ হাজার ১০০ ইউএস ডলার, ১টি প্রিমিও প্রাইভেট কার, ৩টি মোটর সাইকেল, ১টি বিদেশী রিভলবার, ১টি বিদেশী পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২ টিম্যাগজিন, ৩ টি পাসপোর্ট এবং ৩৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। রোববার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, প্রায় ৪/৫ মাস আগে চক্রটির মূল হোতা জলিলের পরিকল্পনায় ঈসমাইল হোসেন এবং মনোরঞ্জন মন্ডল দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ শেষে টার্গেট নির্ধারন করে। কারণ, ইনক্রেডিবল গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে প্রদান করা হয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহের সময় কোন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী থাকে না।

আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোরঞ্জন ওই গার্মেন্টসে সাব-কন্টাক্টের কর্মী হিসেবে মার্চের ২য় সপ্তাহ থেকে আসা যাওয়া শুরু করেন। এর আড়ালে তিনি গার্মেন্টসের অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতেই ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তবে তাদের এপ্রিল এবং মে মাসের ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিলের বেতন দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এবং মে মাসের বেতনের টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে। অবশেষে জুনের বেতন সংগ্রহের সময় পুলিশ স্কট থাকবে না নিশ্চিত হয়ে ৭ জুন ডাকাতির দিন নির্ধারন করে তারা। ঘটনার প্রায় ১২-১৫ দিন আগে ঈসমাইল, জলিল এবং মনোরঞ্জন মাঠ পর্যায়ে রেকী করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান নির্বাচন করেন।

ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন প্রথমে ৩টি মোটর সাইকেল যোগে ছয়জন একটি সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। পেছনের আরোহীদের সবাই অস্ত্র বহন করেছিল। অন্যদিকে ছিনতাইয়ের টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। মনোরঞ্জন গার্মেন্টস এলাকা থেকে ডাকাত দলটিকে প্রতি মূহুর্তের তথ্য সরবরাহ করছিলেন। সাড়ে ১১ টার দিকে মোবাইলে মূলহোতা জলিলকে টাকা উত্তোলনের জন্য গার্মেন্টসের লোকজন মাইক্রোবাসে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে জানান মনোরঞ্জন। তথ্যের ভিত্তিতে সফিপুরে অপেক্ষমান তিনটি মোটরসাইকেল নিরাপদ দূরে থেকে মাইক্রোবাসটি অনুসরণ করতে থাকে। টাকা উত্তোলনের পর ফেরার পথে খাড়াজোড়া এলাকায় দুটি মোটর সাইকেল মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে মাইক্রোবাসের গতি কমিয়ে দেয়। তৃতীয় মোটরসাইকেলটি মাইক্রোবাস থামিয়ে দিয়ে কৌশলে ব্যারিকেড দিয়ে ফেলে। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসেরর গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে এবং অতর্কিতভাবে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে গুলি ছুঁড়ে। এতে একটি গুলি ফ্যক্টরীর সহকারী মার্চেন্ডার রাজীব মজুমদার গুরুতর জখম হন।

পরবর্তীতে তারা মাইক্রোবাসে থাকা ফ্যাক্টরীর লোকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাত্র ৫-১০ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলে এলোপাথারি গোলাগুলির ফলে দলের মূল হোতা জলিলের হাতেও গুলিবিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা মোটর সাইকেলযোগে জামগড়া কাশিমপুর রোডে অপেক্ষমান প্রাইভেট কারের কাছে পৌছান। গুলিবিদ্ধ জলিল এবং লুটকৃত টাকা নিয়ে সাগর ও রিয়াজ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লে. কর্নেল সারওয়ার বলেন, তারা প্রথমে সকলেই সাগরের খিলগাঁওয়ের বাসায় যান। সেখান থেকে জলিলকে মালিবাগের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পথিমধ্যে টাকাগুলো ভাগ করে নেন। অপারেশনে অংশগ্রহন ভেদে সবাইকে ৮ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা এবং অস্ত্র বহন ও গুলি এবং প্রাইভেট কার প্রদান করার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে টাকা দেওয়া হয়। 

তিনি আরো বলেন, মূলত ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেটে এই ডাকাতির ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দলের মূল হোতা জলিলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি ২০১৬ সালে প্রবাসে পাড়ি জমান। ৭-৮ মাস আগে দেশে ফিরে আবারো ডাকাতির পরিকল্পনা করেন জলিল।চক্রটি ডাকাতি, ছিনতাই ছাড়াও মাদক, চাদাঁবাজী ও পতিতাবৃত্তির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

আগামীনিউজ/আরিফ/জেএস