ঢাকা: চাহিদা মতো মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে প্রায়ই মারধর করতো ছেলে। ওই ঘটনায় থানায় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মা। বিষয়টি জানতে পেরে মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছেলে। সে মোতাবেক বন্ধুদের মাধ্যমে একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি কিনেন। তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়া না হলে মাকে হত্যার হুমকি দিতে থাকে মাদকাসক্ত ছেলে।
সোমবার (১৮ মে) ভোররাতে অভিযুক্তকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
এর আগে ৮ মে রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা করেন ছেলে নির্যাতনের শিকার এক মা। তিনি ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকায়। স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছেন। এক মেয়ে সরকারি চাকরিজীবী। ছেলে মিল্লাত হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময় অসৎ সঙ্গে মেলামেশার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকের টাকার জন্য মাকে মারধর ও ঘরে ভাঙচুর করতেন। একাধিকবার তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও সংশোধন হয়নি। বরং দিনকে দিন তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে।
মামলার এজাহারে বর্ণনা অনুযায়ী, মামলার আগের দিন রাতে মাকে মারধর করেন মিল্লাত। মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য তিনি প্রথমে মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করলে তিনি মাথা ও কানে আঘাত পান। এর আগেও ছেলে তাকে মাদকের টাকা না পেয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে ওই মা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় র্যাব-২। ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার মেজর এইচ এম আরেফিন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, পান্থপথে নিরাপত্তা চৌকি থেকে গ্রেফতারের পর তার বাইকের মিটার বক্সের সামনে থাকা প্যাকেট থেকে একটি অস্ত্র ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিল্লাত জানিয়েছেন- মায়ের মামলার কারণে সে বাসায় আসতে পারছিল না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাকে খুঁজছিল। এজন্য তাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছিল। মামলা তুলে নিতে মাকে দুইদিন আগেও মিল্লাত হুমকি দিয়েছিল। পরে বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি অস্ত্র কেনে। গ্রেফতারের সময় সে বাসায় যাচ্ছিল। মা যদি মামলা তুলে না নেয় তাহলে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার।
এর আগে মিল্লাতকে পান্থপথের একটি চেকপোস্ট থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র্যাব। তাকে মায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মামলার পরের দিন ওই নারী বলেন, ঘটনার দিন মিল্লাত (ছেলে) অতিরিক্ত মারধর শুরু করে। প্রায় দুইঘণ্টা জিম্মি করে পেটাতে থাকে। বাথরুমে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। এরপর আমি ঘর বের হয়ে দৌড়ে নিচে যাই। নিচতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল দিলে তারা অনেকক্ষণ পর দরজা খোলে। তাদের পা-হাত ধরে আশ্রয় চাই। এরপর তারা আমাকে আশ্রয় দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে মিল্লাতকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি সে আবার বাসায়। পরে আমার চিৎকারে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন এসে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়। মামলার পর প্রায় মাকে হুমকি দিতে ছেলে বাসায় আসত বলে জানান এই নারী।
আগামী নিউজ/ আরিফ/ তাওসিফ