লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পিতার হাতেই শ্বাসরোধে খুন হয় দেড়বছর বয়সী শিশুকন্যা ফারজানা সুলতানা রাহিমা। সোমবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সন্তান হত্যাকারী ঘাতক পিতা ফয়েজ আহাম্মদ মনু (৪৫)। ঘাতক মনু চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে।
আদালতে দোষ স্বীকার করে ঘাতক ফয়েজ আহাম্মদ মনু খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জানায়, তাদের পাশের বাড়ির মতিনদের সাথে জমি পরিমাপ এবং বিদ্যুতের লাইন টানা নিয়ে তার সাথে পূর্ব থেকে বিরোধ চলছিল। তাদেরকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতেই নিজের শিশু কন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। গত ৫ই মে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাড়িতে খেলাধুলা করছিল শিশু রাহিমা। এ সময় সবার অজান্তে রাহিমাকে কোলে তুলে বাড়ি থেকে একটু দূরে নির্জন ঝোঁপের কাছে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সেখানেই লুকিয়ে রাখে মনু। এরপর বাড়িতে এসে তার মেয়ে হারিয়ে গেছে বলে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করতে থাকে সে।
সারাদিন চলে যাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মেয়ে হারানোর সাধারণ ডায়রী করেন পিতা মনু নিজেই। এরপর পুলিশসহ বাড়ির আশপাশের বিভিন্ন স্থানে শিশু রাহিমাকে খোঁজাখুজি করা হয়। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি।
৮ মে শুক্রবার রাত ১২টার পরে শিশু রাহিমার লাশ ওই ঝোঁপের কাছ থেকে নিয়ে এসে নিজ বাড়ির টয়লেটের সেপটি ট্যাংকিতে ফেলে দেয় পিতা মনু নিজেই। পরদিন শনিবার সকাল ৭টায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় ফোনে খবর দেয় তার মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে তার বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকিতে।
এরপর পুলিশ এসে সেপটি ট্যাংকি থেকে শিশু রাহিমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় শিশু রাহিমার মা রাশেদা আক্তার সুমি বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, শিশুটি নিখোঁজ হওয়া এবং লাশ উদ্ধার থেকে তার পিতার গতিবিধি পুলিশের কাছে সন্দেহ হচ্ছিল। পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামানের নির্দেশনায় পিতা ফয়েজ আহাম্মদ মনুকে সোমবার সকালে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর জেরার মুখে শিশু কন্যা রাহিমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে। এতে খুনের মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়। পরে খুনের যাবতীয় পরিকল্পনা ও লাশ গুমের বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঘাতক পিতা ফয়েজ আহাম্মদ মনু। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রহস্য উম্মোচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
আগামী নিউজ/ ইউসুফ/ তাওসিফ