জেলখানা থেকেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা। জেলে থাকা অবস্থায় মিলছে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শ। সেখানেই এবিটি সদস্যরা পাচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা।
পরে জামিনে বেরিয়ে ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা এবং সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এবিটির শীর্ষ পর্যায়ের স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে অনলাইনে।
ঢাকার আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৪। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত এবিটির নারীসহ পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ঘেটে এসব তথ্য পেয়েছে র্যাব।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি দল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- অলিউল ইসলাম ওরফে সম্রাট ওরফে আব্দুল্লাহ (২৩), মোয়াজ্জিম মিয়া ওরফে শিহাদ ওরফে আল্লাহর গোলাম (২০), সবুজ হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ এবাজ উদ্দিন (২৬), আরিফুল হক ওরফে আরিফ ওরফে হৃদয় (২০), রাশিদা ওরফে হুমায়রা (৩৩)।
আজ শনিবার বিকেল ৪টায় কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেফতার অলিউল ইসলাম আব্দুল্লাহ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তিনি এইচএসসি পাসের পর কিছুদিন স্থানীয় মসজিদে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সম্পৃক্ততার কারণে ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। জেলখানায় থাকাকালীন দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শ পান এবং সেখানেই তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেন।
ফেসবুক ছাড়াও তিনি বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালু রাখেন। তিনি একটি উগ্রবাদী চ্যানেলের অ্যাডমিন হিসেবে উগ্রবাদী কার্যক্রম ও সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। ইতিপূর্বে আটক মাওলানা জসিমুদ্দীন রাহমানির অনুসারী শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তাদের কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি বর্তমানে দক্ষিণ অঞ্চলের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। প্রায় তিন বছর ধরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতার সঙ্গে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়া গেছে।
গ্রেফতার মোয়াজ্জিম মিয়া ওরফে শিহাদ ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে আকৃষ্ট হতো। ধীরে ধীরে তিনি সশস্ত্র জঙ্গিবাদে অংশ নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফেসবুকে আনাস আদনান নূর নামক ব্যক্তির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। ম্যাসেঞ্জারে একটি উগ্রবাদী গ্রুপের তিনি অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করেন। আল্লাহর গোলাম আইডিতে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে চাঁদা সংগ্রহে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অনলাইন মোবাইল মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের রেজিস্টার জব্দ করা হয়। বর্তমানে সাভারের একটি মাদরাসায় তিনি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আগামীনিউজ/মামুন