ছিনতাইকারীদের টার্গেট প্রাইভেটকার-সিএনজি-অটোরিকশা

নিজস্ব প্রতিবেদক ‌ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০, ০৬:২১ পিএম

ঢাকা: ছোট যানবাহন ছিনতাই করাই টার্গেট তাদের। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশার মতো ছোট যানবাহন ছিনতাই করাই টার্গেট এসব ছিনতাইকারীর। টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন কিংবা স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না তাদের।

ছিনতাইয়ের জন্য কখনো তারা যাত্রী বেশে, কখনো বিয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া করার কথা বলে ছিনতাই করে থাকে। ছিনতাইয়ের জন্য জখম কিংবা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাতেও পিছুপা হতো না তারা।  

প্রথমে তারা টার্গেটকৃত নির্ধারিত গন্তব্য ঠিক করে চালককে নিয়ে রওয়ানা দেয়। যেখানে পূর্ব থেকে তাদের অন্যান্য সহযোগীরা ওৎ পেতে থাকে। পৌঁছা মাত্র ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে যানবাহন নিয়ে নিরাপদে ফিরে সটকে পড়ে।

সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থানাধীন কাঠগড়া পালোয়ান পাড়াস্থ মোল্লা বাড়ির বাঁশ ঝাড় এলাকায় মো. শামীম বেপারী বাবু (২৮) নামে এক পাঠাও রাইড চালককে খুন করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মো. শাহিন বেপারী (৫৮) বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৫২। ওই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-১।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, নিহত শামীম বেপারী বাবুর বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন চৌমুধিয়া গ্রামে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট শামীম। সে খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়া মধ্যপাড়ায় তার স্ত্রীসহ বসবাস করতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে শামীম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেছিল। শামীম নিজে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের কাজ শুরু করে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আড়াইটার দিকে রামপুরা ফরাজি হাসপাতালের সামনে হতে একজন যাত্রী নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

গভীর রাতেও ভিকটিম বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে টেলিভিশন সংবাদের মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ সনাক্ত করে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনার পর র‌্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর আশুলিয়া থানাধীন জামগড়াস্থ রুপায়ন মাঠ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতাররা হলেন- মামুনুর রশিদ (২২), মাহবুবুর রহমান (২০) এবং মোমিন মিয়া (২০)। এসময় আসামিদের কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইলফোন ও হত্যাকারীর রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, তারা একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর ন্যায় টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে না। তারা শুধুমাত্র মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশার মত ছোট যানবাহন ছিনতাই করে থাকে।

গ্রেফতার মামুনুর রশিদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। সে প্রায় ৫ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত ও চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল।

তার দেয়া তথ্য মতে, ঘটনার আগের দিন রাতে সে ভিকটিমের মোটরসাইকেলে করে গাবতলী থেকে আশুলিয়া যায় এবং তাকে টার্গেট করে।

ঘটনার দিন আবার ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে এবং তার মোটরসাইকেলযোগে গাবতলী হতে আশুলিয়ায় পৌঁছে দিতে বলে। দুপুর ২টার দিকে গাবতলী হতে আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধুমপানের কথা বলে পাশের বাঁশ ঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওৎ পেতে থাকা মাহবুব ও মোমিন ভিকটিমের উপর আক্রমণ করে।

শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, গ্রেফতার মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জামগড়া এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে। তার চায়ের দোকানে বসেই তারা সব ধরনের পরিকল্পনা করে থাকে। ঘটনার দিন ভিকটিমকে সেই প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করে।

গ্রেফতার মোমিন মিয়া জানায়, সে পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। সে প্রায় ১১ বছর ধরে আশুলিয়া এলাকায় চক্রের হয়ে ছিনতাইকৃত গাড়ি বিক্রয়ের কাজ করে থাকে।

র‌্যাব-১ সিও বলেন, চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই করে আসছিল। শামীমকে হত্যার পর ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙ্গে ফেলে এবং নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেয়। জ্যাকেটে রক্ত লেগে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে খুলে ফেলে দেয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও ঘটনাস্থলে ফেলে দেয় মাহবুবুর রহমান।

আগামীনিউজ/সুমন/নুসরাত