টেকনাফের নোয়াখালী পাহাড়ে মানবপাচারের আস্তানা

নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০, ১১:১৪ এএম

ঢাকা : টেকনাফের নোয়াখালী পাহাড় এলাকায় আস্তানা গড়ে তুলেছে মানবপাচারকারীরা৷ বঙ্গোপসাগরের ছেঁড়াদ্বীপের কাছে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন পাচারের আগে তাদের সাত দিন সেখানে রাখা হয়েছিল৷

উদ্ধার হওয়া তিনজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ওই পাহাড়ে এনে জড়ো করা হয় কয়েকদিন ধরে৷ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফের নোয়াখালি ঘাট থেকে তাদের ছোট ছোট নৌকায় করে গভীর সমুদ্রে আরেকটি বড় ট্রলারে তোলা হয়৷ শাহপরী দ্বীপ ও ছেঁড়াদ্বীপের দক্ষিণে  পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ওই ট্রলার ডুবে যায়৷ তবে অভিযোগ আছে পাচারকারীরা ইচ্ছে করে ট্রলারটি পাথরের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়৷

টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার সোহেল রানা জানান, ‘আমাদের প্রাথমিক হিসেবে ১৩৮ জন ছিল ওই বোটে৷ তাদের মধ্যে ১৫ জনের মরদেহ এবং ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে৷ বাকিদের কোনো খোঁজ মেলেনি৷ নিখোঁজদের মধ্যে ৭/৮ জন পলাতক রয়েছে৷ তারা দালাল চক্রের সদস্য৷ তারা আগেই বোট থেকে লাফ দিয়ে পড়ে বলে জানা গেছে৷’

উদ্ধার হওয়ার রোহিঙ্গাদের একজন দিলবাহার থাকতেন উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে৷ দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে দিল বাহার ট্রলারে উঠেছিলেন সকাল সাতটার দিকে৷ তাদের প্রত্যেকের জন্য দালালের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়৷ দিলবাহার তিন হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন৷ বাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌছার পর শোধ করার কথা ছিলো৷ ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর দিলবাহার তার এক মেয়েকে নিয়ে বেঁচে ফিরলেও তিন ছেলে মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে৷

দিলবাহার বলেন ‘৬দিন আগে আমাদের ক্যাম্প থেকে এনে পাহাড়ে রাখা হয়৷ আরো অনেককে পাহাড়ে আনা হয়৷ আমার স্বামী আগেই মালয়েশিয়া গেছেন৷ এবার আমি আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলাম৷’

১৪ বছর বয়সের রাজিমা আক্তারও মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল৷ সে জানায় ‘টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালেরা আমাদের সাতজনকে পাঁচ দিন আগে পাহাড়ে নিয়ে যায়৷ আরো যারা ছিলেন তাদের কাউকে আগে আনা হয়৷ কাউকে আমাদের পরে আনা হয়৷ পাহাড়ে আমরা ১২০ জন নারী ও পুরুষ এবং ১৮ জন শিশু ছিলাম৷ ঐদিন প্রথমে ২০-৩০ জন করে ছোট নৌকায় তোলা হয়৷ এরপর সবাইকে একটি বড় বোটে তোলা হয়৷ বড় বোটটি পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফেটে যায়৷ পানি উঠে ডুবে যায়৷ আমি সেখানে আরেকটি নৌকা পেয়ে সেটা ধরে ধরে তীরে আসি।’

আবুল কালাম টেকনাফ এলাকার একটি ক্যাম্পে থাকেন৷ তিনি জানান, ‘সাইফুল নামে এক দালালকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য৷ আমরা পরিচিত সাতজন একসঙ্গে ছিলাম৷ আমাদের বড় তিন তলা জাহাজে করে নেয়ার কথা ছিলো৷ রওয়ানা দেয়ার কয়েকদিন আগে আমাদের ক্যাম্প থেকে পাহাড়ে নিয়ে রাখা হয়৷ ইচ্ছে করে ট্রলারটি পাথরের সঙ্গে থাক্কা লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হয়৷’

সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার নাঈমুল হক জানান, ‘পাচারকারীরা এর আগেও ওই পাহাড়ে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের এনে পরে পাচার করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে৷ আর আরো অনেককে পাহাড়ে রাখা হয়েছে পাচারের জন্য৷ ওই পাহাড়ে তাদের রাখার জন্য ছোট ছোট আধাপাকা ঘর আছে৷’

টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার সোহেল রানা জানান, ‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে ওই পাহাড়ের কথা জানিয়েছি৷ যতদূর খবর পেয়েছি পাচারকারীর ট্রলার ডুবির খবর পেয়ে পালিয়েছে৷ আর পাচারের উদ্দেশ্যে আরো যাদের জড়ো করা হয়েছিল তাদের দ্রুত যার যার ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ ওই পাহাড়টি টেকনাফের নোয়াখালী পাড়ার কাছে, নোয়াখালী পাহাড় নামে পরিচিত৷’ সূত্র : ডয়চে ভেলে

আগামীনিউজ/সবুজ