পিরোজপুরঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পিরোজপুরে বড় ছেলের কবরের পাশেই দাফন করা হবে। পিরোজপুরে তার মরদেহ পৌঁছার পরপরই দ্রুত জানাজা শেষে দাফন করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
নিজ জেলা পিরোজপুর শহরের কাছেই সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে নিজের ফেরিভায়েড ফেসবুক পেজে সাঈদীপুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে সেখানে দাফনের জন্য কবর খননের কাজ শুরু হয়েছে।
মাসুদ সাঈদী জানান, একই জায়গায় দাফন করা হয়েছে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বড় ছেলে রফিক বিন সাঈদী, ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর সাঈদী, বড় পুত্রবধু সুমাইয়া রাফিক সাঈদীকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুরে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী প্রতিষ্ঠিত আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই জড়ো হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে পারিবারিক কবরস্থানে বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদীর কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে।
পিরোজপুর জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি মো. জহিরুল হক বলেন, হুজুরের মরদেহ নিয়ে ইতোমধ্যেই লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মরদেহ পৌঁছানোর পর দ্রুত জানাজা শেষ করে দাফন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। তার মৃত্যুর খবর শুনে বিপুল সংখ্যক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও ভক্তরা হাসপাতাল এলাকায় জড়ো হন।
নেতাকর্মীরা ঢাকায় জানাজা করতে চাইলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বারণ করা হয়। অনড় অবস্থানে থাকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাতভর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশও সতর্ক অবস্থানে থাকে। অবশেষে ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের। সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পরে টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে কড়া পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরের উদ্দেশে নিয়ে যায় পুলিশ।
কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকাল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন সাঈদী।
পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বুইউ