কুষ্টিয়াঃ কুষ্টিয়ার খোকসা বাজারের ব্যবসায়ী অশোক এবং তার ভাই অসিম পালের বাড়িতে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে গত ১৭ জুন দিবাগত গভীর রাতে ১৭/১৮ জনের একটি ডাকাত দল গড়াই নদের আইয়ুবের ঘাট চরে একত্রিত হয় ।
ডাকাতির পরিকল্পনার এক পর্যায়ে ডাকাত দলের সদস্য সামাদ এবং ফারুকের সাথে দলের বাকী সদস্যদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। মত বিরোধের কারণে এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সহকর্মী সামাদ এবং ফারুককে জবাই করে হত্যা করে বালুচাপা দেয় অন্যান্য ডাকাত সদস্যরা। পরে পরিকল্পলা অনুযায়ী রাত আড়াইটার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর এলাকার ব্যবসায়ী অশোক এবং অসিম এর বাড়ির তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। দুই সহদরের বাড়ীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতেরা।
গত ১৭ জুন দিবা গত রাতে ব্যাবসায়ীর বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা এবং ২০ এবং ২১ জুন তারিখে খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের গড়াই নদের চর থেকে অজ্ঞাত ব্যাক্তির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার লোমহর্ষক বিবরন দেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম।
২৭ জুন বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এবিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ১৭ জুন দিবাগত আড়াইটার দিকে খোকসা বাজারের ব্যবসায়ী অশোক এবং তার ভাই অসিম পালের বাড়িতে ডাকাতি করে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। এই ঘটনার পরের দিন অসিম পাল বাদী হয়ে খোকসা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
ডাকাতির ঘটনার পরে গত ২০ এবং ২১ জুন স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের গড়াই নদের চর এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই দুই ঘটনায় জেলা জুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। দুটি ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে কাজ শুরু করে খোকসা থানা পুলিশ। সাথে যোগ দেন জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ।
পুলিশ সুপার বলেন, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার রাতে রাজবাড়ীর পাংশা এবং কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার কৃতরা হলেন, রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার বসা গ্রামের মনছের মন্ডলের ছেলে মতিয়ার মন্ডল(৪৭) ও তার ভাই শান্ত মন্ডল(২০) কুষ্টিয়ার খোকসা থানার ওসমানপুর কলপাড়া এলাকার মজিদ শেখ এর ছেলে সাহস শেখ(২১) একই উপজেলার খানপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ঝেলে রয়েল হোসেন(২১)এবং বসোয়া গ্রামের দুলাল প্রমানিকের ছেলে শুকাই আলী প্রমানিক(২৫) । গ্রেপ্তারের পর তাদের হেফাজত থেকে লুট করে নিয়ে আসা স্বর্ণালংকারসহ বেশ কিছু জিনিষ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির কথা স্বীকার করতে গিয়ে খোকসা গড়াই নদে উদ্ধার হওয়া দুই ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করে বালু চাপা দিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন তাঁরা।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মূলত মতবিরোধের কারণে ডাকাত দলের সদস্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের দৌলতখালি গ্রামের হুরমত আলীর ছেলে ডাকাত দলের সদস্য সামাদ(৩৩) এবং ময়মনসিংহ জেলা জামালপুর থানার মোলান্দহ গ্রামের বিপ্লব মৃধার ছেলে ফারুক(২৮) কে তার সহকর্মীরা গলা কেটে হত্যা করে। লাশ গুম করার জন্য চরের মধ্যে বালুচাপা দেয়া শেষে তারা ডাকাতি করতে যায়।
বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত ৫ আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এমআইসি