ঢাকাঃ দুজনের মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। তবে বিয়ের পর স্বামী যৌতুকের জন্য নির্যাতন করায় আদালতে মামলা হয়। অবশেষে দুই পক্ষের সালিশ বৈঠকে বিয়ে বিচ্ছেদের শর্তে মামলা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে খুশি হয়ে আধা মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন মো. মিজান মোল্যা (২৫) নামের এক যুবক।
বুধবার (২১ জুন) বিকেলে এ ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামে। মিজান মোল্যা রুদ্রবানা পশ্চিম পাড়া এলাকার ইলিয়াস মোল্যার ছেলে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর একই গ্রামের ইলিয়াস মোল্লার ছেলে মিজানুর মোল্লা ও প্রতিবেশী মোশারফ মোল্লার মেয়ে প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের দুই মাস পরে মেয়েপক্ষ তাদের বিয়ে মেনে নেয়। প্রথমদিকে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই চলছিল। কিন্তু মাস দুই পরেই তাদের সংসারে কলহ দেখা দেয়।
ছেলে অশিক্ষিত আর মেয়ে স্নাতকে পড়াশোনা করেন। শিক্ষিত বউ দরিদ্র শ্বশুরের পরিবারের কাউকে তেমন পাত্তা দেন না। শ্বশুর-শাশুড়িকে রান্নাবান্না করেও খাওয়ান না। এ নিয়ে পরিবারে কলহ শুরু হয়। এরপর স্ত্রী স্বামীকে শর্ত দেন যে সংসার টেকাতে হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকা যাবে না। তারা আলাদা সংসার করবেন।
স্ত্রীর শর্তের বিষয়টি মিজানুর মোল্লা তার বাবা-মাকে জানালে ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে তাদের আলাদা করে দেন। তারপরও সবসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। একপর্যায়ে মেয়ের বাবা-মা মেয়েকে দিয়ে আদালতে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করান। বুধবার দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাবর আলীর বাড়িতে দুইপক্ষের উপস্থিতিতে বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি হয়।
মো. মিজান মোল্যা বলেন, বিয়ের তিন মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে। আমার স্ত্রী আমার নামে মামলা করে হয়রানি করতে থাকে। মামলার একপর্যায়ে আমি নিয়ত করি স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পেলে আধা মণ দুধ দিয়ে গোসল করব। আজ ফয়সালা হওয়ায় নিয়ত পূর্ণ করলাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবর আলী বলেন, আমার বড়িতেই এই সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তে দুই পক্ষই খুশি। বিচ্ছেদ একটি হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলেও দুই পক্ষই স্বস্তি পেয়েছে। বিচ্ছেদের পর দুধ দিয়ে গোসল করায় বিষয়টি মুহূর্তে সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বানা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাজ ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু আদালত থেকে ইউনিয়ন পরিষদে তাদের করা মামলার বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ২২ জুনের মধ্যে সালিশের মাধ্যেমে সমাধানের চেষ্টার জন্য নোটিশ করেন। দুই পক্ষই আমার এলাকার বাসিন্দা ও ঘনিষ্ট। তারা নিজেরাও আত্মীয়। ছেলের বাবা ও মেয়ের বাবা সম্পর্কে আপন মামাতো ফুপাতো ভাই। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের সংসার শুরুর পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। আজ বিচ্ছেদে দুই পক্ষই খুশি।
বুইউ