যশোরঃ বিগত দিনে অচল ঘোষণা করা ৮৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এখন সচল হয়েছে। তবে চিকিৎসার পরিবেশ আছে ঠিক আগের মতো। এরপরেও বহাল তবিয়তে চিকিৎসা কার্যক্রম চলে আসছে। সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান মালিকরা অনিয়ম করার সুযোগ পাচ্ছেন। অচল প্রতিষ্ঠানগুলো সচল হলো কিভাবে তা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, যশোর জেলায় ২৮৮ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। বিগত দিনে এরমধ্যে ২৩৪ টি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে। বাকি ৫৩ প্রতিষ্ঠান মালিক সরকারি আদেশ প্রথম অবস্থায় মানেননি। যে কারণে প্রতিষ্ঠান মালিকদের কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। এরমধ্যে ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মালিক নোটিশের জবাব ছিলো অসন্তোষজনক। পরবর্তীতে সূর্যের হাসি ক্লিনিকছাড়া সব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনলাইনে আবেদন পাঠায়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত দিনের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে নানা অনিয়ম দেখতে পান। পরে ৮৯ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন তিনি।
তখনকার সময় সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীনের মতামত প্রতিবেদনে ৮৯ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স পাওয়ার অযোগ্য বলে জানানো হয়। ওই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সেবিকা ও প্যাথলজিস্ট নেই। এছাড়া নিম্নমানের অস্ত্রোপচার কক্ষ, প্যাথলজি বিভাগের নোংরা পরিবেশ ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হয়। ৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসনা আকবর মেমোরিয়াল, হেলথ ফোরটিস, রজনী ক্লিনিক, পল্লী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জোহরা ক্লিনিক, মা-মনি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুক্তি ক্লিনিক, বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সায়রা সার্জিক্যাল, ছুটিপুর প্রাইভেট ক্লিনিক, সালেহা ক্লিনিক, সীমান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মায়ের দোয়া পাইভেট ক্লিনিক, মনোয়ারা ক্লিনিক, ফাতেমা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিক, রিজু হাসপাতাল, রাজগঞ্জ ক্লিনিক উল্লেখযোগ্য।
লাইসেসন্স না পাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ছিলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অচল ওই সব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বর্তমানে সচল হয়ে গেছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পেয়ে গেছে লাইসেন্স। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা পরিবেশ আগের মতোই রয়ে গেছে। কৌশলে ব্যবসা করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামও পাল্টে ফেলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সেবিকা ও প্যাথলজিস্ট ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম ও ত্রুটির মধ্যে রোগীর অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অথচ মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব নেই কারো। মূলত ব্যবসার ফাঁদ পেতে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। আর রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, চিকিৎসাসেবায় অনিয়ম করে কোনো ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ দেয়া হবে না। ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো: মনির হোসেন/ইউইউ