ঝিনাইদহঃ এক বিঘা জমিতে পটলের চাষ করেছেন ঝিনাইদহের সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক রফিউদ্দিন বিশ্বাস। তিনি ১৮০০-১৯০০ টাকা মণ দরে পটল পাইকারি হাটে বিক্রি করছেন। যা কেজিপ্রতি ৪৫-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে এই পটলই বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে। তার আশা, সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা লাভবান হবেন।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাসাটিয়া ইউনিয়নের গুড়পাড়া গ্রামের কৃষক সেলিম মিয়া এবার বেগুনের চাষ করেছেন দেড় বিঘা জমিতে। শীতের সিজনে বেগুন চাষে খরচ কম লাগলেও এই সিজনে বেগুনের ব্যাপক খরচ হয়। এক কেজি বেগুন চাষে সার, কীটনাশক, পানি দিয়ে কমপক্ষে ১০-১২ টাকা খরচ হয়ে যায়। তারপরও বর্তমানে বাজার দর ভালো। তিনি বলেন, কাঁচাসবজি হওয়ায় একেক দিনে একেক রকম দামে পাইকারি বিক্রি হয়। আমরা পাইকারি বেচি ১৭-২০ টাকা দরে। কিন্তু খুচরা বিক্রি যারা করে তারাই বেশির ভাগ লাভ খেয়ে ফেলে।
আরেক কৃষক রবজাল মিয়া বলেন, আমি কয়েক রকমের সবজি চাষ করি। তার মধ্যে সিম, পটল, বেগুন আছে। প্রথম দিকে সিম উঠায় ভালো লাভ হয়। অর্ধবিঘা জমিতে আট হাজার টাকা খরচে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার সিম বিক্রি করি। বেগুনেও ছিল ভালো লাভ। তবে তিনি জানান, মূল বাজার নিয়নন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট। কৃষকের লাভের চেয়ে ওই বাজার সিন্ডিকেটই বেশি লাভ করে।
ঝিনাইদহ হাটখোলার খুচরা বিক্রেতা বাশার মিয়া জানান, পটল ৬০ টাকা, আলু ১৮ টাকা, বেগুল ৪০ টাকা, কাঁচাঝাল ৮০ টাকা, লালশাক এক আঁটি ৫-৮ টাকা, সজিনা রকম ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০-২৫ টাকা, লাউ ৩০-৩৫ টাকা, ডাটা এক আটি ১৫-২০ টাকা, পুইশাক এক আটি ১৫-২০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা, শশা ৩০, গাজর ৩০, পেঁয়াজ ৩০, রসুন ৭০ টাকা।
একই বাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লাউ রকমভেদে ১৮-২২ টাকা, টমেটো ১৫-২০ টাকা, বেগুন ৩০-৩৫ টাকা, শশা ২০-২৫ টাকা, পটল ৫০ টাকা, সিম ৩০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গাজরের দাম ১৪০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০, কাঁকরোলের কেজি ৫০-৬০, চুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তদার মইনুল হোসেন বলেন, তেলের দাম হঠাৎ বাড়ার কারণেই সবজির দাম বেড়েছে। এখন সবজি পরিবহনে বেপারিদের প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। যেখানে সবজির দাম ধীরে ধীরে কমার কথা, সেখানে গাড়ি ভাড়ার কারণে সবজির দাম বেড়েছে।
শাক-সবজির দাম কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গোলাম রব্বানী নামের এক ক্রেতা অবশ্য ক্ষোভ ঝাড়লেন। তিনি বলেন, মূল কৃষক একবার লাভ করে, এরপর পাইকারি বিক্রেতারা একবার লাভ করে, তারপর লাভ করে খুচরা বিক্রেতারা। আরে ভাই কোথায় যাব, বলতে পারেন। বাসায় দুই মুরব্বিসহ সাতজন আমরা।
বাজার করতে আসা রিকশাচালক রতন চন্দ্র বলেন, এখন ইঞ্জিনচালিত রিকশা অনেকেই চালায়। আগের সেই ইনকাম আর নেই। দিন শেষে মালিককে দিয়ে সর্বোচ্চ ২০০-২৫০ টাকা থাকে। তাতে কিচ্ছু হয় না। পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে খুচরা বিক্রেতারা কমপক্ষে ৫-১৫ টাকা লাভে বেচা বিক্রি করে। কেউ দেখে না। গরিবদের কথা বাদ দেন, মধ্যবিত্তরাও চরম বিপাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় সারা বছর কম বেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ বছর জমিতে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছেন। সে মোতাবেক জরুরি সভা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যদের নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অভিযানে নামবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যরা।
বুইউ