ঝিনাইদহে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ 

জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ নভেম্বর ১১, ২০২২, ১১:১৯ এএম

ঝিনাইদহঃ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েছেন, আবেদনও করেছেন বহুবার, কিন্তু কাজ হয়নি। অবশেষে নিজেরাই নির্মাণ করলেন একটি বাঁশের সাঁকো। ঘটনাটি ঝিনাইদহের মহেশপুরের। উপজেলা শহর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মাণ করা হয় সাঁকোটি। ১২০ হাত দীর্ঘ সাঁকোটি স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করেছেন জুগিহুদা গ্রামের মানুষ। 

এলাকাবাসী জানায়, কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড়ে জুগিহুদা, ফতেপুর, কদমতলা, ষড়াতলা, নিমতলাপাড়া, বেড়েরমাঠসহ ১০টি গ্রাম। গ্রামগুলোর মানুষকে মহেশপুর শহরে যেতে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু নদের এই সাঁকো পার হয়ে শহরের পথ মাত্র এক থেকে দুই কিলোমিটার। নদের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে জলিলপুর, বৈচিতলা এবং নওদা গ্রাম। দক্ষিণপাড়ের এই তিনটি গ্রাম পড়েছে মহেশপুর পৌরসভার মধ্যে। এখানে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি আলিম মাদরাসা ও একটি মডেল প্রাইমারি। ফলে উত্তর পাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের ছেলে মেয়েরা নদটি পার হয়ে মাত্র ২০০ গজ দূরে দক্ষিণপাড়ের জলিলপুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন নদ পার হতে নৌকা একমাত্র ভরসা। 

এছাড়া এসব গ্রামের মানুষ নানা কাজে নৌকায় নদ পার হয়ে শহরে আসে। যে কারণে তাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুম এলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

এখানে একটি ব্রিজের জন্য গত কয়েক যুগ ধরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েছেন এবং আবেদনও করেছেন বহুবার। কিন্তু কাজ হয়নি। সবাই আশ্বাস দিয়েছে, বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে গ্রামের মানুষ এক সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। সাঁকোটি নির্মাণ হলে উত্তর পাড়ের ওই ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ স্বল্প সময়ে মহেশপুর শহরে যাওয়া আসা করতে পারবে। 

জুগিহুদা গ্রামের আমির হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদে উত্তর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত জুগিহুদা গ্রামেই রয়েছে সাড়ে তিন হাজার ভোটার। উত্তরপাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা নৌকায় করে পারপার হতেন। কিন্তু কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণে তারা উদ্যোগ নেন সাঁকো নির্মাণের। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধির দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও ব্রিজ করা হয়নি। এই এলাকার মানুষগুলোকে মহেশপুর শহরে যেতে হলে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। যদি জলিলপুর- জুগিহুদা গ্রামের মাঝে একটি ব্রিজ হতো তাহলে ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে শহর।

বাঁশের সাঁকো তৈরিতে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান জানান, তারা এলাকার মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, পেরেক চেয়ে নিয়ে এটি তৈরি করছেন। আর প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ সাত দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এটি তৈরি করছেন। তিনি জানান, এইখানে একটি ব্রিজ হলে পাশের জলিলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল যেতে পারবে আমাদের শতশত শিক্ষার্থী।

ওই এলাকার পারাপারের কাজ করা নৌকার মাঝি বসুদেব হালদার জানান, এখানে সাঁকো বা ব্রিজ হলে আমার আয় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি চাই এখানে একটি ব্রিজ হোক। এলাকার মাানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট আর ভোগান্তি লাঘব হোক।  

নদের উত্তর পাড়ের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মহেশপুর পৌর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এম এ আসাদ জানান, আমরা প্রতিদিনই প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে মহেশপুর শহরে যায়। ব্রিজটি হলে ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই শহরে যেতে পারবো। আপাতত গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে। তবে আমাদের দাবি— এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।

উপজেলা এলজিইডি অফিসার শৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ জানান, বিষয়টি অবগত আছি, ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশসহ অনূর্ধ্ব-১০০ মিটারের একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। প্রকল্পটি পাস হলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি হচ্ছে এমন সংবাদ জানা নেই। তবে কেউ লিখিত আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুইউ