টাঙ্গাই‌লে ভাসমান নৌকায় জুয়া

জেলা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল নভেম্বর ৫, ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম

টাঙ্গাইলঃ জেলার বাসাই‌লে ভাসমান নৌকায় চলছে জুয়ার আসর। যা মানুষ মারার কল হিসেবেই বেশি পরিচিত স্থানীয়‌দের কা‌ছে। এতে নদী এলাকাগুলোতে এই জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসাও জমে উঠেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ এসব স্থানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন আসলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই চলে যান তারা।

জানা যায়, বাসাইল উপজেলার দাপনাজর এলাকায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাইভেটকার ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সাযোগে জুয়ারুরা দুপুর দুইটার মধ্যে জড়ো হন। এরপর সেখান থেকে তাদের বড় একটি নৌকায় উঠানো হয়। এরপর নৌকা চলতে থাকে আর জুয়ারুরা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এই নৌকাটি একসময় টাঙ্গাইল সদর ও আরেক সময় মির্জাপুর উপজেলা সীমান্তে গিয়ে চলে যায়। রাত আটটা পর্যন্ত একটানা চলে এই ওয়ান টেন নামের মানুষ মারার কল। খেলা শেষে আবার পূর্বের স্থানে ফিরে আসেন জুয়ারুরা। সেখানে মাদকের আড্ডা শেষে আবার রাত ১২টার পর একইভাবে শুরু হয় এই জুয়া খেলা। এভাবে দিন রাতা মিলে চলছে এই জুয়া খেলা।

আর এই মানুষ মারার কলের মালিকানায় রয়েছেন মির্জাপুরের আরিফ, ছাওয়ালী ফতেপুর এলাকার সোহরাব মেম্বার, টাঙ্গাইলের ইকবালসহ আরো দুই/তিনজন প্রভাবশালী জুয়ারু।

জুয়ারুদের দাবি গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক এবং এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম‌্যা‌নেজ করেই এই জুয়া খেলা পরিচালনা করা হয়। একারণে নির্বিঘ্নে এই খেলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

নাম প্রকাশ না করার শ‌র্তে স্থানীয়রা জানান,  দিনের বেলায় দীর্ঘদিন ধরে চলা এই জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে তাদের এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া অনেক সময় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসেন, তাদের ধাওয়া করেন আবার অনেক সময় জুয়ারুদের সাথেই বসে আড্ডা দেন কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।৭/৮দিন আগে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যরা এসেছিলেন। সেই রাতে জুয়া খেলা বন্ধ রাখা হলেও পরবর্তীতে সেখানে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম‌্যা‌নেজ করে আবার শুরু করে এই জুয়া খেলা। এ কারণে এই এলাকার পরিবেশটা দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। কয়েকদিন আগে র‌্যাবের একটি দল সেখানে অভিযান চালিয়েছিল কিন্তু পরে কি হয়েছে তা তিনি জানেন না।

টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (দক্ষিণ) দেলোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর কোম্পানী কমান্ডার আবুল হোসেন সবুজ অভিযানের কথা স্বীকার করে জানান, সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তারা যাওয়ার আগেই জুয়ারুরা খবর পেয়ে যায়। এছাড়া জুয়ারুরা নৌকা নিয়ে একেক সময় একেক স্থানে চলে যায়। এক সময় টাঙ্গাইল সদরে আবার আরেক সময় মির্জাপুরের দিকে চলে যায়। এছাড়া জুয়ারুরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তাদের লোকজন বসিয়ে রাখে। কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশের সাথে সাথেই জুয়ারুদের কাছে খবর চলে যায়।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন জানান, খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা/বুইউ