নিখোঁজ মায়ের ‘লাশ শনাক্তে’ ময়মনসিংহে মরিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ০১:২২ পিএম

ময়মনসিংহঃ ফুলপুরে উদ্ধারের পর দাফন হওয়া লাশটি খুলনা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) বলে দাবি করেছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। লাশ শনাক্তের জন্য শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তিনি ফুলপুর থানায় পৌঁছান। এরপর উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও আলামত দেখে দাবি করেন লাশটি তার মায়ের।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পোশাক ও অন্যান্য আলামত দেখে মরিয়ম মান্নান দাবি করেছেন লাশটি তার মায়ের। তবে ডিএনএ পরীক্ষা না করে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

এ সময় থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত লাশটি আমার মায়ের। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত আছি।’

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এই মাত্র।’

রাত ১২টা ৪ মিনিটে আরেক ফেসবুক পোস্টে মরিয়ম মান্নান লেখেন, ‘আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি। আর কারও কাছে যাবো না। কাউকে আর বলবো না আমার মা কোথায়। কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো না আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন। কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি।’

এরপর থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছিল ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ফুলপুর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন মরিয়ম। এ সময় অজ্ঞাত ওই নারীর পোশাকের কয়েকটি ছবি মরিয়মকে পাঠান ওসি। ওই পোশাক দেখেই অজ্ঞাত নারীর লাশকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম।

পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানা এলাকা থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়। ওই থানার ওসি আমাদের জানিয়েছেন, বয়স ৩২ উল্লেখ করে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে তার ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। আমরা নিশ্চিত নই যে, ফুলপুরে যে নারীর লাশ পাওয়া গেছে তা মরিয়মের মায়ের। কারণ মরিয়মের মা রহিমার বয়স ৫২-৫৫ বছর। যদি তার মেয়ে পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেও থাকেন এরপরও ডিএনএ টেস্ট করে প্রকৃতভাবে লাশ শনাক্ত করতে হবে। কারণ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।'

আজ সকাল ৭টার দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘আমার মায়ের চুল, আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত আমি চিনবো নাতো কে চিনবে!’ আমার সাংবাদিক ভাইবোন এবং আমার বন্ধু, আমার শুভাকাঙ্খীদের সাথে কথা বলবো এবং প্রশাসনিক সকলের সকল প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো আমার মায়ের লাশ অফিসিয়ালি আমার হাতে পাওয়ার পরে। কিভাবে আমার মায়ে'র লাশ আমি খুঁজে পেলাম- সেই গল্পও আপনাদের শুনাবো, একটু সময় আমাকে দয়া করে দিন।’

সর্বশেষ ৮টার দিকে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘যারা যারা বলেছিলেন আমার মা আত্মগোপন করেছেন তারা সবাই নাক ঢাকার জন্য ব্যবস্থা করুন। কারণ আমার মার পঁচা গলা আর পোকায় খাওয়া লাশটা নিয়ে আমি আপনাদের কাছে সবার আগে যাবো!’

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নামেন রহিমা বেগম। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা নিচে নেমে ব্যবহৃত স্যান্ডেল, ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর প্রক্রিয়া মেনে ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। 

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতে বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।’

এমবুইউ