খাগড়াছড়িঃ রামগড় উপজেলার রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পড়াশোনায় চরম বিঘ্ন ঘটছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবক সবাই চিন্তিত। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) লিখিতভাবে জানিয়েও শিক্ষক পাওয়া যায়নি। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণি পাঠ্যক্রম সম্পন্নের ব্যাপরে ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের।
১৯৫২ সালে ৩ একর ২০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২৭জন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র ১১জন। ১৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। প্রায় ৭শ শিক্ষার্থীর জন্য বাংলা ও ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ সর্বজনিন এই দুই বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।
শিক্ষকের পদ রয়েছে ৮টি, আছেন ৪ জন। ৪টি পদই শূন্য। সব বিভাগের জন্য বাধ্যতামূলক গনিত বিষয়ে ৩টি পদে ১জন শিক্ষকও নেই। জীববিজ্ঞানের ২টি পদই শূন্য। জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
১৯৬৮ সালে সরকারিকরণ করা বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। ভূগোল, চারুকলা, কৃষিবিজ্ঞান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। বিজ্ঞান বিভাগে শুধুমাত্র ভৌতবিজ্ঞানের ১জন শিক্ষক আছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার বিষয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন, তাদের যে, কি দুরাবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ পড়াশোনার চিন্তায় খুবই উদ্বিগ্ন।
অভিবাবকরা বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামের এই বিদ্যালয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক পোষ্টিং দেওয়া হোক।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আবদুল কাদের বলেন, মাউশির ডিজি মহোদয়কে শিক্ষক স্বল্পতার বিষয় জানিয়েছি। পুরো দেশব্যাপী সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেশকিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও সমতল জেলার তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের এই বিদ্যালয়টিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দ্রুততম সময়ে এখানে শিক্ষক দেওয়া না হলে প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার মানোন্নয়নে করা কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কতটা শূন্যস্থান পূরন করা যায়।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে শূন্যপদের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ওই অতিরিক্ত শিক্ষকদের এখানে পোষ্টিং দেওয়া সম্ভব। বাংলা বিভাগের শিক্ষক মো. হারুনুর রশীদ জানান, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
অবিভাবক বেলাল হোসাইন উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সন্তানদের পড়ালেখার ভবিষৎ নিয়ে এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রত্যেকেই চিন্তিত। পাহাড়ের গরিব এলাকা হওয়ায় আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠী বাইরে নিয়ে তাঁদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য।
এরকম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গরিব মা-বাবার প্রশ্ন এটাই কী সন্তানদের ভবিষ্যৎ।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিত্য অনুপম রুদ্র ও ওমর ফারুক মাহির সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানায, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিভাগের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বাইরের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। অনেক সময় কলেজের বড় ভাইদের শরাণাপন্ন হতে হচ্ছে। এই অবস্থায় মানসম্মত শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটছে। বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় ব্যবহারিক ক্লাস বুঝতে সমস্যায় পড়তে হয়। দ্রুত শিক্ষক দেওয়ার দাবি জানিয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আবদুল কাদের বলেন, বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বেশকিছু অংশ প্রায় খোলা। সীমানাপ্রচীর থাকা খুব দরকার। বাইরের লোকজন সহজেই স্কুল কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ছে। সীমানা প্রাচীরের উত্তর পাশে তারকাটা কেটে আশপাশের লোকজন ভেতরে ময়লা আর্বজনা ফেলে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ নোংরা করছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও এই অপতৎপরতা বন্ধ করা যায়নি।এখানে মাদকাসক্তের আনাগোনার খবরও এই প্রতিনিধিকে জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই এখানে। বিদ্যালয়ে একটি শিক্ষার্থী মিলনায়তন বড় প্রয়োজন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু কাওসার বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও এই স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক পোষ্টিং হয়নি । বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
রামগড় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা খোন্দকার মো.ইফতিয়ার উদ্দিন আরাফাত বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক দেবময় ভট্টাচার্য কে জানানো হয়েছে। শিগগিরই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদের ডিও লেটার নিয়ে এখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক পোষ্টিং পেতে প্রচেষ্টা করব। অন্যান্য বিষযগুলোর খবর নিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএস