বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে ঝাঁপ, ২ দিন পর ভাই-বোনের লাশ হস্তান্তর

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম জুলাই ৬, ২০২২, ১১:০১ এএম

কুড়িগ্রামঃ জেলার ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের ধাওয়ায় নদীতে ডুবে মৃত ভাই বোনের লাশ উদ্ধারের ২ দিন পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তের ৯৪২ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের ৮ নং সাব পিলারের পাশে বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

মৃত শিশুরা হলেন, পারভীন (৮) ও সাকিবুর (৪)। তারা কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও সামিনা বেগম (৩৫) দম্পতির সন্তান। 

এর আগে রবিবার দুপুর দেড়টায় উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তের ৯৪৩ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলার থেকে ৫০ গজ ভারতের ভিতরে নীলকমল নদীতে  ভাই বোনের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়ন সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।

উল্লেখ্য, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইট ভাটায় কাজ শেষে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ১ জুলাই (শুক্রবার) রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্ত এলাকায় আসেন রহিচ উদ্দিন। এ সময় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীল কমল নদীর পাড়ে নোম্যান্স ল্যান্ড এনে দাঁড় করিয়ে রেখে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আসতে বলে। এ অবস্থায় লোকজনের শব্দ শুনে ভারতীয় সেউটি ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে তাদের ধাওয়া করে। অবস্থা  বেগতিক দেখে  দুই সন্তানকে নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করেন সামিনা বেগম। কিন্তু তীব্র স্রোতের মধ্যে হাতের বাঁধন খুলে ডুবে যায় দুই শিশু। ডুবে যাওয়ার দুই দিন পর রবিবার সকালে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরে ওইদিন মৃত সন্তানের লাশ ফেরৎ চেয়ে লালমনিহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার বরাবর একটি আবেদন করেন বাবা রহিজ উদ্দিন। আবেদনের প্রেক্ষিতে 
মঙ্গলবার রাতে ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এস থেকে ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে জনৈক নারায়ণ চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে বিএসএফ-বিজিবি বৈঠক শেষে শিশু দুইটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এসময় ভারতীয় বিএসএফ এর পক্ষে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১, সেউটি-২ ক্যাম্পের বিএসএফ, সাহেবগঞ্জ থানা পুলিশ ও বিজিবির পক্ষে লালমনিহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার ফরিদ, অনন্তপুর ক্যাম্প ইনচার্জ আরফিন, পুলিশের পক্ষে এএসপি সার্কেল সুমন রেজা, ফুলবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুর রহমান, ওসি (তদন্ত) সারওয়ার পারভেজ, নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়ন ওয়ার্ড সদস্য আজিজুল ও মেছের আলী উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে লালমনিহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার ফরিদ উদ্দিন পরিবারের কাছে শিশু দুটির লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শাহীন আহমেদ/এমবুইউ