স্মৃতিময় কৃষ্ণচূড়ার লালে রঙিন বিদ্যালয় প্রাঙ্গন

উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর) মে ১৪, ২০২২, ০২:৪৪ পিএম

যশোরঃ অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ষড়ঋতুর বাংলাদেশ। মাস ভেদে দুই মাস অন্তর ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে রয়েছে রূপের পালাবদল। প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্ম। প্রকৃতি কাঠফাঁটা রোদে কৃষ্ণচূড়ার আবীরে সেজে উঠেছে দেখেই যেন মনে গাছের মধ্যে আগুন জ্বলছে। দেশের বিভিন্ন জায়গার মতই যশোরের শার্শা উপজেলার নিজামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনটি সেজেছেন নতুন রূপে। কৃষ্ণচূড়ার গাছের লাল ফুলের জন্য শোভা পাচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, গ্রীষ্মের রোদের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়ে ফুটেছে সবুজ চিকন পাতার মাঝে এই রক্তিম পুষ্পরাজি, যেন আগুন জ্বলছে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের মধ্যে যেদিকে চোখ যায় চোখে পড়ছে লাল রঙ্গের মূর্ছনা। চোখ ধাঁধানো কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য যেন হার মানায় ঋতুরাজকেও।

বিদ্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের গেটের মধ্যে ঢুকতেই বামপাশে দ্বিতীয় তলা ভবনের পাশেই রয়েছে সৌন্দর্যময় এই কৃষ্ণচূড়া গাছ। ফুলে ভরপুর গাছটি যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে ব্যস্ত। তবে গাছটি এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে লাগানোর পিছনে রয়েছে স্মৃতিময় রহস্য। 

জানা যায়, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা বেগম নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে কর্মরত থাকা অবস্থায় এই বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেন। কিন্তু বদলি জনিত কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। হঠাৎ বদলির কারণে গত ৫ বছর আগে ২০১৭ সালে চলে যেতে হয় পাশ্ববর্তী আরেকটি বিদ্যালয়ে। সেখানে গেলেও মায়া আর ভালোবাসার জালে আবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে  স্মৃতি ধরে রাখতে লাগিয়েছিলেন এই কৃষ্ণচূড়া গাছটি। এখন স্মৃতির সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটি ঠিকই আছে, ফুটেছে অনেক ফুল যা সাজিয়েছেন নতুন রূপে। স্মৃতিময় গাছটি এখন সৌন্দর্য লীলাভূমি। 

সহকারী শিক্ষিকা আফরোজা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ও স্মৃতিময় করে রাখতে গাছটি লাগিয়েছিলাম। এখন পরিপূর্ণ ফুল আসছে শুনে নিজেও আনন্দিত। 

বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মজনুর রহমান তুহিন বলেন, গ্রীষ্মের খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার গাছটি। রক্তিম লালে প্রকৃতিকে ও যেন অনেক অপরূপ দেখায়। ঠিক তেমনি বিদ্যালয়ের মধ্যেও কৃষ্ণচূড়া গাছটির জন্য বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা আফরোজা বেগম বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত না থাকলেও যখন তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন এই বিদ্যালয়টি সুন্দর পরিবেশ করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। বিদ্যালয় চত্বরে দেয়ালে লিখন, দেয়ালে বাংলাদেশের ইতিহাসের ফটকসহ ফুলের বাগান আরো বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন তিনি। যা প্রায় কাজই শেষ হয়েছে। এছাড়া তিনি এই বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ রাখা মা সমাবেশ আয়োজন করা হতো। তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্কুল শিক্ষক, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ দেশের উর্ধতন কর্মকর্তা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

তারা আরো বলেন, তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল কর্মঠ ও চৌকশ। আফরোজা বেগমের চিস্তা ধারণা ছিলো ভিন্ন। যার কারণে শুধু এই কৃষ্ণচূড়া গাছই নয় এ ধরণের কাজের মাধ্যমে তার স্মৃতি এখনো কেউই ভুলতে পারে না। 

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এ গাছের পত্র পল্লব এবং আগুনলাল ফুলের জন্য বিখ্যাত। উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফুলগুলো ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাড় রক্তিম লাল হয়। ভেতরের অংশে হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাঁপড়িগুলো প্রায় ৭-৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার এই ফুল আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে ফুল ফোঁটে এপ্রিল ও জুনে।

মোঃ মনির হোসেন/এমএম