ঢাকাঃ পর্যটকের পদভারে মুখর পার্বত্য জেলা পাহাড় কন্যা বান্দরবান। ঈদের ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসেছেন পর্যটকরা। দুই বছর করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে না পারলেও এবার চিত্র ভিন্ন। এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পাহাড় ও মেঘের মিতালি উপভোগ করতে বান্দরবান ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা।
এ কারণে জেলার সব পর্যটন স্পটে বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোও। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে জেলার মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, নীলগিরি, রোয়াংছড়ির দেবতাখুম, রুমার বগালেক, থানছির তমাতুঙ্গি-নাফাখুমে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
জেলার পর্যটন স্পটের মধ্যে মেঘের রাজ্য নীলাচল বিখ্যাত। এখানে বৃষ্টির দিনে নীলাচলের সৌন্দর্য একেবারে ভিন্ন রূপ ধারণ করে। হালকা বৃষ্টির পর দূর আকাশের মেঘের সারি ভেসে আসে নীলাচলের চূড়ায়। পাহাড় চূড়া থেকে দেখলে মনে হবে, এ যেন মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা। চারিদিকে সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের দৃশ্য আর বিশেষ করে মেঘকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখতে ভ্রমণ পিপাসুরা নীলাচলে ভিড় করে থাকেন।
পর্যটকরা বলেন, ‘বান্দরবানে আমরা ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছি। আসার পর থেকেই বৃষ্টি। তারপরও আমরা বসে থাকিনি। বৃষ্টিতে ভিজেই আমরা পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখছি। বৃষ্টিতে অন্যরকম এক আমেজের ছোঁয়া পাচ্ছি আমরা। খুবই ভালো লাগছে আমাদের।’
এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লাবণি আক্তার বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে এসেছি। আশার পর থেকেই বৃষ্টি। এ বৃষ্টিতে ঘুরে বেড়াতে অনরকম এক অনুভূতি পাচ্ছি। খুবই ভালো লাগছে।’
আরেক পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি বান্দরবানে বেড়াতে এসেছি এবারই প্রথম। বান্দরবানের দৃশ্য এত সুন্দর, কখনও ভাবতে পারিনি! অসাধারণ বান্দরবান!’
পর্যটক ইমরান কায়েস বলেন, ‘আমি পরিবারের সঙ্গে মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরিসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ঘুরেছি। সবাই খুব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করেছি। অনেক সুন্দর বান্দরবান।’
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বরত সুকুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আজ (৪ মে) ১৮শ টিকেট বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও পর্যটক বাড়বে।
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বান্দরবানের প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত আছে। তাছাড়া প্রত্যেক পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃংখলা বাহিনীর মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন। তাই ঈদের ছুটিতে আগত পর্যটকরা নির্বিঘ্নে আনন্দে ভ্রমণ করতে পারবেন। তাদের নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হবে না।
তবে টানা ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাতে নিরাপদে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন সেজন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের সব ছুটি বাতিল করেছি। পর্যটকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্যর আমরা সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
জেলায় পর্যটকদের সেবায় রয়েছে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট, হাউস। এ ছাড়াও পর্যটক পরিবহনে রয়েছে চার শতাধিক চাঁদের গাড়ি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জেলার ২০ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এমএম