রংপুরঃ রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় কালবৈশাখী তাণ্ডবে বিধস্ত হয়েছে দেড় হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে কয়েকশ’ গাছপালা। সেই সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন নারী-শিশুসহ অন্তত ৩০ জন। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাতে দুই দফায় এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। এ সময় বৃষ্টি হয়েছে সাত মিলিমিটার। মঙ্গলবার রাত ৯টায় এবং মধ্যরাত ৩টার দিকে দুই দফায় কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। এতে রংপুর নগরীসহ জেলার ৮ উপজেলায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায়।
জেলা ত্রাণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুই দফা ঝড়ে নগরীসহ জেলার আট উপজেলায় বিধস্ত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। অনেক আধাপাকা টিনের ঘরবাড়িও বিধস্ত হয়েছে। ঘরচাপা পড়ে ১০ শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, ঝড়ে অনেক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি।তার পরেও খোঁজ নিচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুই দফায় ঝড়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের তালপট্রি, হাজিপাড়া, নরসিং হাজিপাড়া, কিশামতপাড়া ও মর্ণেয়ার চর, মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট, জায়গীরহাট, বলদীপুকুর ও মিলনপুর ইউনিয়ন, পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের শ্যামদাসের পাড়া, ষোলঘড়িয়া ও তামালপুর এবং কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা এলাকার টাংরির বাজার, মিলন বাজার, চর চতুরা, হরিণচড়া আদর্শ বাজার, বাঁশদহসহ নগরী ও জেলার আট উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ-পালা উপড়ে পড়ে, মাটির বাড়িঘর ভেঙে যায়। কারো কারো ঘরের চাল উড়ে গেছে। ধসে পড়েছে বাড়ির দেয়ালও। বাদ যায়নি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতি হয়েছে ধান, ভুট্টা, আম ও কলাগাছের। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় শত শত পরিবার খোলা আকাশের নিচে মালামাল সরিয়ে নিয়েছে। তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতে নারী শিশুসহ প্রায় ৩০জন আহত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামের আমিনা বেওয়া, সালাম মিয়া ও আবেদা বেগম জানান, তাদের দুটি করে টিনের চালা উড়ে গেছে।
তালপট্টি গ্রামের সাহাবুল ইসলাম, মোনা মিয়া ও সাইফুল ইসলাম জানান, তালপট্টি গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। শত শত গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ঝড়ে বিভিন্ন স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে তার ছিড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এসব সংস্কার করে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে দুই দিন সময় লেগে যেতে পারে।
এব্যাপারে রংপুরের জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, ঝড়ে নগরীসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এসএস