নীলফামারীঃ সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন। তিনি বর্তমানে এ উপজেলার একজন অধিপতি। এ মাসের ১০ তারিখ রাতে তিনি এক হাত নিয়েছেন সাংবাদিকদের। শহরের তিনমাথা মোড়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় তিনি প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে ঘোষণা দেন হাত দিয়ে না, পা দিয়ে সাংবাদিকদের শায়েস্তা করতে হবে। হাত দিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্চিত করলে হাত নোংড়া হয়, এজন্য তিনি সাংবাদিকদের পা দিয়ে শাস্তি দিতে চাইছেন। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রৃত ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাংবাদিক সমাজ। বিশিষ্টজনরা হয়ে যান হতবাক। এ ঘটনায় গণমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় টকশো। ঘটনার বিষয় পৌছে যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কানেও। ফলে তিনি এক পক্ষকাল পরে শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার বিকালে জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিক সমাজের কাছে তার অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চান। অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের কপি চলে আসে দেশের বহুল পঠিত অনলাইন পোর্টাল আগামী নিউজের প্রতিনিধির কাছে। ওই লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আধুনিক পৌর সবজি বাজার নির্মাণকে নিয়ে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে প্রতিপক্ষরা জড়িয়েছেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে যেসব উর্দুভাষী বিহারী ভারত থেকে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এসেছেন তাদের বসবাসের কারণে রেলওয়ের কয়েকশত একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। তার এসব বক্তব্যকে ঘিরে কথা হয় শহরের একাধিক বিশিষ্টজনের সঙ্গে। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ধান ভাঙ্গতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছেন। সত্য মিথ্যার মিশেলে বক্তব্য দিয়েছেন। আর তাহলো যেদিন সাংবাদিক মোত্তালেব হোসেন হককে শহরের পাঁচমাথা মোড়ে রাত আনুমানিক সোয়া দশটার সময় মারপিট করা হয়। সেদিন বার ছিল শুক্রবার। তারিখ ছিল ৮ এপ্রিল। এ ঘটনা ঘটার পর রাত প্রায় পৌনে এগারটার সময় তিনি (মোখছেদুল মোমিন) তার অনুসারীদের নিয়ে শহরে মহড়া দিয়ে রেলশ্রমিক লীগের কারখানা শাখার কার্যালয়ে ফিরে যান। যেহেতু সাংবাদিক মোত্তালেব হোসেন হক উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক। সে কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনের নেতৃত্বে দলের একাংশ ঘটনার প্রতিবাদে ৯ এপ্রিল রাতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে তিন মাথা মোড়ে। সম্পাদকের নেতৃত্বে মিছিল ও প্রতিবাদ সভার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের নেতৃত্বে ১০ এপ্রিল রাতে শহরে মিছিল ও তিনমাথা মোড়ে বিশাল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিনের সভায় তার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহিন হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর জোবায়দুর রহমান শাহিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পু এদিন মোখছেদুল মোমিন তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাত দিয়ে সাংবাদিক পেটালে হাত নোংরা হবে, এজন্য পা দিয়ে সাংবাদিকদের শাস্তি দিতে হবে। আমি সিংহ, আমি ঘুমিয়ে আছি, আমাকে জাগানোর চেষ্টা করা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। তার এ বক্তব্য দ্রুত নেটিজেনদের হাতে চলে যায়। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ঝড় থামাতে গিয়ে পরিবেশ অনুকূলে আনতেই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। একই সঙ্গে তারা বলেন, রেলের ভূমি কারা দখল করে বাণিজ্য করছে, আর নিরীহ উর্দুভাষী বিহারীদের ওপর সেই দোষ চাপিয়ে দিলেন। বিশিষ্টজনদের এসব মন্তব্যের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জিকরুল হক/এমএম