নীলফামারীঃ সৈয়দপুরে পৌর সবজি মার্কেট নির্মাণে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের মাথায় চাঁদাবাজির খড়গ ঝুলছে। গত ১২ এপ্রিল ওই মার্কেট নির্মাণের ঠিকাদার ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুল ইসলাম আসাদ বাদী হয়ে বিজ্ঞ আমলী আদালত সৈয়দপুর, নীলফামারীতে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করে।
এদিকে ওই সাংবাদিককে সমাজে হেয় করতে জুতার মালা গলায় পড়িয়ে হলুদ সাংবাদিক আখ্যা দিয়ে শহরের মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে রাতের আঁধারে কে বা কারা এ কাজটি করেছে তা চিহ্নিত করতে পারেনি গোয়েন্দা বিভাগ গত তিন দিনে।
অভিযুক্ত ওই সাংবাদিকের নাম মোতালেব হোসেন হক। রংপুর থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক দাবানল’র নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি তিনি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক।
নাগরিক সমাজে দুর্বৃত্ত কর্তৃক সাংবাদিককে এমন হেয় করার ঘটনা দেখে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তারা জোট গঠনে মাঠে নেমেছে। এরই অংশ হিসাবে শনিবার স্থানীয় জিআরপি হোটেল চত্বরে সাংবাদিকদের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রিন্ট, টিভি ও অনলাইন পোর্টালের কমপক্ষে অর্ধশত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। নির্মাণাধীন ওই মার্কেটটি গড়ে তোলা হচ্ছে ব্যাকবোন ড্রেনের ওপর। এ ড্রেনটি দিয়ে পৌর বাজারের পানি বের হয়ে সরাসরি খড়খড়িয়া নদীতে গিয়ে পড়ে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করে এ ড্রেনটি। পাকা অবকাঠামো নির্মাণে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এমন আশংকা তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক দাবানল পত্রিকায় গত ৬ এপ্রিল। প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে এই পত্রিকার সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হককে শহরের পাঁচমাথা মোড়ে ৮ এপ্রিল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ঠিকাদার ও যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদের নেতৃত্বে ৮/১০ জন যুবক বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করে ওই সাংবাদিককে। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সাংবাদিককে প্রাণে বাঁচিয়ে ভর্তি করে স্থানীয় ১০০ শয্যা হাসপাতালে। ঘটনার প্রতিবাদে ৯ এপ্রিল উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিনের নেতৃত্বে দলের একাংশ শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা করে। এরপর দিন ঠিকাদার আসাদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক মোতালেব হোসেনকে চাঁদাবাজ উল্লেখ করে পাল্টা মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন।
এমন অবস্থায় রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান সৈয়দপুরে আসেন। ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এ সময় রেলওয়ের ভূ-সম্পদের নকশা খুলে দেখেন পৌর সবজি মার্কেটটি রেলওয়ের জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য তিনি মার্কেট নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলেন যে, এই মার্কেটের জায়গা রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগ বরাদ্দ দিবে। যারা বরাদ্দ নিতে ইচ্ছুক তারা যেন পাকশী অফিসে গিয়ে আবেদন করে। রেল কর্মকর্তাদের এমন ঘোষণায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহীন হোসেনের নেতৃত্বে পৌর পরিষদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে। এসময় পৌর পরিষদের সঙ্গে রেল কর্মকর্তাদের বাগযুদ্ধ শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক থেকে রেল কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এদিনই আবার পৌর পরিষদ শহরে বিক্ষোভ শেষে সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন করে। এমন অবস্থায় ভূমি বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে পৌর ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। এমন পরিস্থিতি বিষয়ে মন্তব্য জানতে কথা হয় শহরের বিশিষ্টজন ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকুর সঙ্গে। তিনি বলেন, যেই মালিকানা পাক না কেন দোকান বরাদ্দ দিতে হবে যারা দীর্ঘদিন ধরে ওই বাজারে সবজি ব্যবসা করে আসছে এমন সবজি ব্যবসায়ীদের। কোনভাবেই যেন এসব সবজি ব্যবসায়ী দোকান বরাদ্দ পাওয়া থেকে বাদ না যায়। প্রয়োজনে তাদের পক্ষ নিয়ে আইনী লড়াই করা হবে।
এমএম