ভ্যানচালক বাবার মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি এপ্রিল ১২, ২০২২, ০৪:৩১ পিএম

ঠাকুরগাঁওঃ ভ্যানচালক বাবার মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া মেয়ে আল্পনা আকতার এর পড়ালেখার দায়িত্বভার নিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম জুয়েল।

গতকাল (১১ এপ্রিল) সোমবার রাতে উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে সেই ভ্যানচালকের বাসায় গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানকালে তিনি পরবর্তী সময়ের আল্পনার পড়ালেখার দায়িত্বভার নেওয়ার ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে মুঠোফোনে উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম জুয়েল জানান, মেডিকেলে চান্স পাওয়া আল্পনা আকতার এর বাবা আফতাবর রহমান সামান্য একজন ভ্যানচালক। নিজস্ব জমি জমা না থাকলেও একমাত্র রিক্সা ভ্যান চালিয়ে তিনি ৩ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন। তার একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি এবার তার এক মেয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটি আমার এলাকার একটি গর্বের বিষয়। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে মেয়েটির মেডিকেল কলেজে  তার পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আল্পনা আকতার এর বাবা আফতাবর রহমান জানান, ভিটেমাটি আর ভ্যান গাড়ী ছাড়া আমার আর কোন সহায় সম্পদ নেই। চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। সে এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এদিকে মেয়ে আল্পনা আক্তারের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়েছে তার। এছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন আর ছোট মেয়ে পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে।

একমাত্র ছেলেকে এতদিন পড়ালেখার খরচ নিয়মিত নিয়ে আসছেন রিক্সা ভ্যান চালিয়ে। ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে পড়ালেখা ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়ীটি।

একদিন ভ্যানগাড়ী নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠেনা। এবার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগের খবরে আনন্দের পাশাপাশি খরচের চিন্তায় পড়েছিলেন তিনি।

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান আসলাম জুয়েল মেয়ের মেডিকেলে ভর্তির টাকাসহ তার পড়ালেখার দায়িত্বভার নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তিনি এখন অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত।

আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার মেয়ে আল্পনার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হয়েছে। ডাক্তারি পড়ালেখার অনেক খরচ। এই নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। এই নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর মেয়ের ভর্তির যাবতীয় ব্যবস্হা করে দিতে এগিয়ে এসেছেন ডা. কামরুল ইসলাম। তিনি ফোন করে আমাদের খোঁজখবর নেওয়া সহ সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা।

সদ্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে।

আল্পনা আক্তার বলেন এই সফলতায় আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যার অনুপ্রেরণায় আমার এ সফলতা তিনি হলেন আমার বাবা। যিনি সারা দিন ভ্যান চালিয়ে রোজগার করেন। আর আমাকে স্বপ্ন দেখান ডাক্তার হওয়ার। আমাদের পরিবারটি অনেক কষ্ট করে চলে কিন্তু তা বাবা আমাকে কখনোই  বুঝতে দেইনি। আমরা বুঝতে পারলেও বাবা কোনোভাবে বুঝতে দিতেন না।

বাবার পাশাপাশি মা অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমার শিক্ষকরা আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি প্রথমে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয়ের স্যাররা আমাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। পাশাপাশি অনুপ্রেরণা দেন যে আমি পারব। সেখান থেকেই আমার স্বপ্ন দেখা শুরু। ফলাফলে বাবা-মা যে খুশি হয়েছে এটাই আমার বড় স্বার্থকতা।

তবে আমি মনে করি, দারিদ্র্যতা সফলতার অন্তরায় না। স্বপ্ন আর পরিশ্রম একসঙ্গে করলে সফল হওয়া সম্ভব। চিকিৎসক হয়ে বাবা, মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের নিকট দোয়া চান তিনি।

আনোয়ার হোসেন আকাশ/এমএম