নির্যাতন সইতে না পেরে পায়ে তালাবদ্ধ শিকল নিয়ে সহায়তা কেন্দ্রে গৃহবধু

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি এপ্রিল ৭, ২০২২, ০৩:৩১ পিএম

পটুয়াখালীঃ কলাপাড়ায় স্বামী ও পরিবারের নির্যাতন সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়েছেন এক গৃহবধু। বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোরে কলাপাড়া পৌরশহরের ব্রাক সহায়তা কেন্দ্রে ওই গৃহবধু পায়ে লোহার শিকলসহ তালাবদ্ধ অবস্থায় এসে পৌঁছালে উপস্থিত সবাই থমকে যান। ওই নারীর মুখ মন্ডল, মাথা ও সাড়া শরীরে নির্যাতনের চিহ্নই যেন জানান দিচ্ছিলো কতটা প্রহার সহ্য করেছেন তিনি।

এরপরেই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে অশ্রুঝড়া বিলাপের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন তার উপড়ে বয়ে চলা নির্মম নির্যাতনের চিত্র। মোসা: মাজেদা বেগম (৫৫)। মহিপুর সদর ইউপির বিপিনপুর গ্রামের নূর-ইসলাম হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ মোট ৫ সন্তানের জননী। তার অভিযোগ, দীর্ঘবছর যাবৎ তার স্বামী তার উপর অমানুসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে।

ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে এ জানান, নির্যাতন সইতে না পেরে ব্রাক সহায়তা কেন্দ্রে এসে অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন তার ব্যবসায়ী স্বামী। অভিযোগের কথা জানতে পেরে গত ১৫ দিন ধরে মোটা লোহার শিকলে বেঁধে রেখেছেন ঘরের একটি খুটির সাথে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তিনি কৌশলে খুঁটির অংশের শিকল খুলে পায়ে হেটে সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছান। তিনি আরো বলেন, আমাকে পাগল বলে, আমার সাথে কেউ ভালো আচারণ করেনা, কথায় কথায় সবাই মারধর করে। এমনকি আমার একমাত্র পুত্র সেও আমার গায়ে হাত তোলে। কেউ আমাকে বুজতে চাইনা। হাত-পা বেঁধে আমাকে মগ দিয়ে ঢেলে ওষুধ পান করায়। এতেপ্রায় সময়ই আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীর কাছে থাকতে চাই। কিন্ত তিনি আমাকে আমার বাবার বাড়িতে একা ফেলে আসেন। প্রায় সময়ই আমাকে একা সময় কাটাতে হয়, এর থেকে আমার মৃত্যু অনেক ভালো।

কলাপাড়া ব্রাক সহায়তা ক্রেন্দ্রের এস্যোসিয়েট অফিসার রিপন বিশ্বাস বলেন, এ নারীর সর্বাঙ্গে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। মূলত আমাদের কাছে অভিযোগ করার ফলে ওনার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। যতটুকু দেখেছি তার সামান্য মানসিক সমস্যা রয়েছে। তবে তা সহনশীল পর্যায়ে। আমরা তাকে মহিপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। পরবর্তী ব্যবস্থা আমরা গ্রহন করবো।

বিপিনপুর ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বর সেলিম হাওলাদার জানান, নুর-ইসলামের স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে জানি, কিন্তু নির্যাতন করা হচ্ছে তা জানা নেই।

অভিযুক্ত স্বামী নুর-ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, ওই নারীকে তার পরিবারের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়েছে। তিনি সুস্থ হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।

রাসেল কবির মুরাদ/এমএম