নীলফামারীঃ উত্তরাঞ্চলে পাথর কেনাবেচার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়ে উঠেছে সৈয়দপুর রেলস্টেশন ইয়ার্ড। প্রতি বছর এ ইয়ার্ড থেকে কমপক্ষে ৬৩ হাজার মেট্রিক টন ভাঙ্গা পাথর কেনাবেচা করা হয়। এ খাত থেকে রেলওয়ে ভ্যাট ও ভাড়া বাবদ বছরে আয় করছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। আর কর্মসংস্থান হয়েছে শতাধিক শ্রমজীবী মানুষের।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, উত্তরাঞ্চলে বাস্তবায়নাধীন সরকারি-বেসরকারি সব মেগা প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারত ও নেপাল থেকে আমদানিকৃত পাথর। এসব পাথর মালবাহী ট্রেনযোগে আসছে চিলাহাটি, বিরল, দর্শনা ও রহনপুর রেল সীমান্ত হয়ে। উত্তরাঞ্চলের মিডল পয়েন্ট সৈয়দপুর। সে কারণে আমদানিকারকরা ব্যবসা ও নিরাপত্তাবান্ধব সৈয়দপুর শহরকেই তাদের পণ্য বেচাকেনার মোকাম হিসাবে বেছে নিয়েছে। বিগত ২০০৮ সালে সৈয়দপুর রেলস্টেশন ইয়ার্ডে পণ্য লোড- আনলোডের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যা অব্যাহতভাবে চলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ ১২ বছর কর্মচাঞ্চল্য না থাকায় সৈয়দপুর রেলস্টেশনের ইয়ার্ড চত্বরে বিরাজ করছিল ভুতুরে পরিবেশ। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে মালবাহী ট্রেনে পাথর আমদানি শুরু হলে ঝিমিয়ে পড়া সৈয়দপুর রেলস্টেশন ফের জেগে ওঠে। মানুষের পদচারণায় ইয়ার্ড চত্বর প্রাণ ফিরে পায়। নতুন করে সৃষ্টি হয় কর্মসংস্থান। শ্রমজীবী মানুষ সুযোগ পায় কাজের। তাদের হৃদয়ে প্রাণের স্পন্দন ডানা মেলে। বর্তমানে মালবাহী বগি থেকে পাথর আনলোড ও ট্রাকে পাথর লোড করার কাজে শতাধিক মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এসব কর্মজীবী মানুষ কাজ শেষে পারিশ্রমিকের অর্থ হাতে পেয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
ভারত ও নেপাল থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০৫০ মালবাহী বর্গি ভর্তি পাথর সৈয়দপুরে আসছে। প্রতি বগিতে ৬০ টন করে পাথর আসে। সবমিলে ৬৩ হাজার মেট্রিক টন সৈয়দপুর আসে আমদানিকৃত পাথর। ভ্যাট ও ভাড়া বাবদ আয় হয় ৭ কোটি টাকা।
কথা হয় পাথর লোড ও আনলোড শ্রমিক জহুরুল, মোকতার, বেলাল, সবুজ, সাগরসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা জানান, দীর্ঘ এক যুগ সৈয়দপুর রেলস্টেশন ইয়ার্ডে কোন কাজ ছিল না। সেই সময়টা আমাদের প্রায় হাভাতে কাটাতে হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছি।
কথা হয় শ্রমিক সর্দার আফতাব আলমের সঙ্গে। তিনি হৃদয় ভরা আনন্দ নিয়ে বলেন, কাজ থাকলে মানুষের হাতে টাকা আসবে। আর টাকা রোজগার হলে শান্তি থাকবে হাতের মুঠোয়। তবে তিনি কিঞ্চিৎ আক্ষেপ করে বলেন, কতিপয় কুচক্রী মানুষ আমাদের কুলি মজুরদের সুখ পছন্দ করছেন না। তারা নানা ছুতো সৃষ্টি করে কাজ করার সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত রাখতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে, যা বড়ই পীড়াদায়ক।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর রেলস্টেশন মাস্টার শওকত আলী মুঠোফোনে রেলওয়ের আয় বৃদ্ধি ও নতুন করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জিকরুল হক/এমএস