কাজে আসছে না জনগণের

বাড়ির উঠানে ৩৫ লাখ টাকার কালভার্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ১২:৪৩ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

কুড়িগ্রামঃ জেলার নাগেশ্বরীতে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭ ফুটের একটি বক্স কলাভার্ট। কালভার্টটির উত্তর পাশের মুখে রয়েছে তিনটি বাড়ি। এসব বাড়ির উঠানে মাটি ফেলে একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কালভার্টটির মুখ। ফলে সেখান দিয়ে একফোটা পানি গড়ানোর উপায় নেই। দেখে মনে হয় বাড়ির উঠানে দেয়া হয়েছে কালভার্টটি। নিমার্ণ সময়ে এলাকাবাসী এবং বাড়ির মালিক কালভার্টটি সরিয়ে অন্যত্র নির্মাণ করতে অনুরোধ করলেও বিষয়টি ভেবে দেখেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।

উপজেলার কচাকাটা-মুড়িয়ার হাট গামী রাস্তার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লুছনি গ্রামে অবস্থিত এ কালভার্টটি জনগণের কোন কাজে আসছে না। কোনদিন কাজে আসবেওনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দে ৯মিটার (২৭ফুট) ৪ অনুপাত ৪ ধরণের বক্স কালভার্টটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের প্রথমদিকে। গেলো ২০২১ সালের জুন মাসে বক্স কালভার্টটি নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই ওই কালভার্টের উত্তর দিকের জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি তোলেন ফজর আলী, নাসির উদ্দিন ও লাল চান মিয়া। ফলে কাজ শুরুর আগেই কালভার্ট দিয়ে পানি নিস্কাশনের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে পানি বের হওয়ার জন্য পাশের জমি দিয়ে সরু একটি নালা কালভার্টটির মুখে সংযোগ দেয়া হয়। জমির মালিক আবদুল খালেক বাড়ি তোলার জন্য সেই নালা বন্ধ করে জমিতে মাটি ফেলে ইতোমধ্যে ভরাট করেছেন।

কালভার্টের মুখে অবস্থিত বাড়ির মালিকদের একজন ফজর আলী জানান, ২০১৭ সালে বন্যার পর তাদের মূল বাড়ি দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে চলে যায়। ওই বছর এই জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নেন তিনি। পরের বছর বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন কালভার্টের কাজ শুর হয়। কালভার্টটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বললেও কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

স্থানীয় আবদুর রহিম, পনির মিয়া জানান, কালভার্ট নিমার্ণের আগেই বাড়ি উঠেছে। আমরা কালভার্টটি পূর্বদিকে সরিয়ে নির্মাণ করতে বলেছিলাম কিন্তু তারা বলেছে যেখানকার নকশা হয়েছে সেখানেই নির্মাণ করতে হবে। সাবেক ইউপি সদস্য আলমাস উদ্দিন জানান, এই কালভার্ট কোন কাজে লাগবে না। বাড়ির উঠানে পড়েছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের টাকা নষ্ট হয়েছে।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, ২০১৭ সালে বক্স কালভার্টটি নির্মাণে নকশা প্রস্তুত করা হয়। ২০১৮ সালে সেটির টেন্ডার হয়। নকশা করার সময় ওই জায়গায় কোন বাড়ি ছিলো না।

কালভার্টটি নির্মাণকালে তদারকির দ্বায়িত্বে ছিলেন উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০২০ সালে তিনি নাগেশ্বরীতে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদানের আগেই কালভার্টটির ভিতের কাজ শেষ হয়েছে। তখন আর কিছু করার ছিলো না। ফলে সেখানেই কাজ শেষ করতে হয়েছে। তিনি আরোও জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গত জুনে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী ওয়াসিম আতাহার জানান, খাল ভরাট করে কালভার্টটির পানি বের হওয়া পথ বন্ধ করার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আগামীনিউজ/এসএসআই