হারানো সংস্কৃতি ফেরাতে বেতাগীতে খেজুর রস পায়েস খাওয়ার আড্ডা

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৭, ২০২২, ০৩:৪০ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

বরগুনাঃ উপকূলীয় জনপদ বরগুনার  বেতাগীতে গ্রামীণ সংস্কৃতির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে  সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে আয়োজন করা হয় বর্ণিল  ও বৈচিত্র্যময়  শীতআনন্দ আড্ডা। এখানে চলে কলা পাতায় ঘন্টাব্যাপি খেজুর রসের পায়েস ( সিন্নী) খাওয়ার  প্রতিযোগিতা। 

জানা গেছে, প্রতি বছরেরর ন্যায় এবারেও বরগুনা-বেতাগী আঞ্চলিক সড়কের পাশ ঘেষে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কবিরাজ বাড়ি প্রাঙ্গনে রবিবার বৈকালিক উৎসব মেতে উঠে মানব সেবায় নিবেদিত সামাজিক সংগঠন যুবরেড ক্রিসেন্টের উদীয়মান স্বেচ্ছাসেবক যুব ভাই-বোনরা। এ উদ্যোগ যেন সময়কে উপভোগ ও জমিয়ে তোলে। এ উৎসবের গল্প এখানেই শেষ নয়। ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি  বিণোদনের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। দেখতে ধূম পরে যায় বিভিন্ন বয়েসী মানুষের। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের দেওয়া হয় ‘খাদক’ উপাধি। 

আয়োজকরা জানান,  খেজুর গাছের রস ও এর তৈরি পিঠা পায়েশ এখানকার খাদ্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য বিষয় হলেও অপরিকল্পিত উন্নয়নের জোয়ারে  নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধনের কারণে এ সময়টায় খেজুর গাছ সংরক্ষন, রোপনে গুরুত্বারোপ  এবং আবহমান বাংলার পুরনো  গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে গত বছর ধরে খেজুর রসের পায়েস (সিন্নী) খাওয়ার উৎসব ও প্রতিযোগিতার  আয়োজন করা হয়। আগমীতে আরও বড় পরিসরে উৎসবের পরিকল্পনা রয়েছে। বৈকালিক এ মিলন মেলায় উপস্থিত হয়ে মানসিক তৃপ্তি  অনুভব করে অংশগ্রহণকারীরা।  

উৎসাহ জোগাতে এ  উৎসবে সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংস্কৃতিককর্মী ও  ব্যবসায়ী সহ নানা পেশার অতিথিরাও অংশ গ্রহণ করে। যারা মতামত ব্যক্ত করেন,  বেতাগী পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবিএম মাসুদুর রহমান খান, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: মাসুম বিল্লাহ, বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রবীন্দ্র নাথ সরকার, বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক লায়ন মো: শামীম সিকদার, থানার এসআই শওকত হাচান, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সভাপতি দিপক কুমার গুহ, ইডার সভাপতি মো: রেজাউল কবির জুয়েল, ধ্রুবতারা ইয়ূথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের জেলা শাখার সহ-সভাপতি মিঠুন দে, শিশু সংগঠন ন্যাশনাল চিল্ডেন ট্রাষ্ট ফোর্স (এনসিটিএফ) উপজেলা সভাপতি  তানজিলা জামান শিফা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবার হোসেন বলেন, খেজুরের রস ও খেজুর গাছ আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।  অর্থনৈতিকক্ষেত্রেও  প্রচুর সম্ভাবনার দ্ধার।   প্রাকৃতিক দুর্য়োগেও ব্যাপক অবদান রাখছে খেজুর গাছ। সংরক্ষন ও  ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ রোপন করতে হবে। 

বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রবীন্দ্র নাথ সরকার জানান, খেজুর গাছ থেকে  রস, রস থেকে পিঠা-পায়েশ ও  গুড় তৈরি হয়। আমাদের সমৃদ্ধ খাদ্য সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে  হলে প্রচুর পরিমাণে   খেজুর গাছের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। 

খেজুর গাছি আজমল হোসেন অভিযোগ করেন, খেজুর গাছের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সূযোগ রয়েছে। কিন্ত  এ জনপদে খেজুর গাছ কেটে ইটের ভাটা তৈরি আবার সেই ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য অবাধে খেজুর গাছ কর্ত্তণ করা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। 

সাংস্কৃতিককর্মী মিলন কর্মকার বলেন, যারা খেজুর গাছ কাটেন তারা গাছি নন। সমাজের দৃষ্টিতে তারা শিল্পী। তারা একেক জন জয়নুল কিংবা এস.এম. সুলতান। তাদের ধারালো দায়ে  রয়েছে শিল্পের ছোঁয়া। তাই হারানো খেজুর গাছ কাটা গাছিদেরও ফিরিয়ে আনতে হবে।

আগামীনিউজ/শরিফ