রংপুরঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে লেখাপড়া চালাতে পারেন নি। এবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবিতে) পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে ভ্যানচালক বাবার ছেলে শাহীন আলম ছিলেন ভীষণ দুশ্চিন্তায়। এবারও টাকার অভাবে শাহীনের স্বপ্ন নিভে যেতে বসেছিল।
ভিটেমাটিহীন দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মেধাবী এই শিক্ষার্থী যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই সহায়তার হাত বাড়িয়ে পাশে দাঁড়ালেন পুনাক। মেধাবী শিক্ষার্থী শাহীন আলমের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা। এবার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন অধরা নয়, শাহীন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন পুনাক সভানেত্রী।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সহায়তার অর্থ তুলে দেন রংপুর জেলার পুনাক সভানেত্রী সোনিয়া আকতার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আনোয়ার হোসেন ছাড়াও পুনাকের সহ-সভানেত্রী লোটাস রায়, মাহমুদা হোসেন, ফারহানা ইয়াসমিন প্রমুখ।
শাহীন আলম ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চান্স পেয়েছিল কিন্তু অর্থের অভাবে লেখাপড়া চালাতে পারেনি। এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সি ইউনিটে মেধা তালিকায় ৬৮তম হয়েছেন। তবে টাকার অভাবে তার ভর্তি অনিশ্চিত ছিল। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে বেড়ে ওঠা শাহীনের মতো গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের অর্থাভাবে স্বপ্ন যাতে ফিকে না হয়ে যায়, এজন্য বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রংপুর জেলার পুনাক সভানেত্রী সোনিয়া আকতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহীন আলম বদরগঞ্জ উপজেলার বুজরুক গ্রামের ভ্যানচালক তাছির উদ্দিনের ছেলে। শাহীনের আরও দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শাহীন ছিল খুব মেধাবী। ছোট বেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা করছেন। তিনি নুরুল হুদা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুর সরকারি সিটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকপাস করেন। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে চান্স পেয়েছিল কিন্তু অর্থের অভাবে লেখাপড়া চালাতে পারেনি।
অভাব-অনটনে জর্জরিত তাছির উদ্দিন অতিকষ্টে ধারদেনা করে সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করতেন। করোনাকালে তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নিজের জায়গাজমি না থাকায় অন্যের জমিতে ঘর করে বসবাস করে আসছেন। তার সামান্য আয় দিয়েই চলে সংসার। একারণে ইচ্ছে থাকলেও ছেলে শাহীনের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির স্বপ্ন পূরণ করতে পারছিলেন তাছির উদ্দিন।
শাহীন আলমের বাবা বলেন, ‘খুব কষ্ট করি ছাওয়াটাক পড়ালেখা করাওছো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়োত ভর্তি করার মতো হাজার দশের টাকা হামার নাই। ওিই তকনে খুব চিন্তাত আছনো। গতবারও এই ছাওয়াটাক টাকা না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়োত ভর্তি করেবার পারো নাই। এবার এসপি অফিস (পুনাক) থাকি ফোন করি হামাক ডাকে নিয়্যা শাহীনের ভর্তির জনতে ২০ হাজার টাকা দিছে। ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হইলে তামরা হামার পাশোত থাকার আশ্বাসও দিছে। এ্যলা ছাওয়া ভাল করি পড়াশুনা করি মানুষ হইলে মোর শান্তি।
শাহীন আলম বলেন, দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর সামর্থ্য নেই। সংসার চালানোই মুশকিল। তার মধ্যে আমার পড়াশোনার খরচ দেওয়া তো অসম্ভব। কিন্তু তার পর স্বপ্ন দেখেছি, কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো, সেখান থেকে পড়াশোনা করে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করব। কিন্তু টাকার অভাবে এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারিনি। এবারও মনে হচ্ছিল ভর্তি হতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমত আর মিডিয়ার ভাইদের কারণে পুনাক থেকে আমার ভর্তি এবং পরবর্তী কয়েকমাসের খরচা বাবদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। মা-বাবার স্বপ্ন আমি পুলিশে চাকরি করি, ইনশাআল্লাহ্ সেই পূরণে আমি চেষ্টা করব।
আগামী নিউজ/এসএস