নেত্রকোণা জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন কেশব রঞ্জন সরকার

নেত্রকোণা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৮, ২০২১, ০৪:২৭ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের ও প্রান্তজনের আওয়ামীলীগ নেতা কেশব রঞ্জন সরকার।

কেশব রঞ্জন সরকার বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নেত্রকোণা জেলা কৃষকলীগের দীর্ঘকালীন সাবেক সভাপতি। আটপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

কেশব রঞ্জন সরকার বলেন- ১৯৬৯ সনে ডিসেম্বর মাসে নেত্রকোণা জেলা শহরের মোক্তারপাড়ার মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভায় বীরমুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর নূরীর নেতৃত্বে আনুমানিক তিন হাজার লোকের মিছিলের সাথে আমিও যোগদান করেছিলাম। ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যেক ঘরে ঘরে প্রচারণা পত্র, লিফলেট ও নৌকার মিছিলে এবং নির্বাচনী পথসভায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। ১৯৭১ সালে স্বপরিবারে ভারতের মহেশখলা ক্যাম্পে অবস্থানকালীন সময়ে দেশের লোকজন মহেশখলায় আসার পর তাদেরকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রিক্রোটিং অফিসার আওয়ামীলীগ নেতা সেকান্দর নূরী মহোদয়ের নিকট নিয়ে যাই ও বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদেরকে ভর্তি করাই। ১৯৭৩ সালে জেলা শহরের সাতপাই এলাকায় অবস্থিত নেত্রকোণা সরকারি কলেজের ঐতিহাসিক মাঠে আগস্ট মাসে বিশাল জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন তৎকালীন সময়ে জাতির জনক মঞ্চে উঠার সময় ১৫/২০জনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন তখন আমিও হাত মিলিয়ে তাঁর সানিধ্য লাভ করি এবং মঞ্চের সামনে মাটিতে বসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র ভাষণ শুনে ছিলাম। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্বপরিবার তৎকালীন স্বদেশের একদল বিপদগ্রামী সামরিক জান্তার হাতে শহীদ হওয়ার পর আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ-সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম সামরিক সরকার বন্ধ করে দিলে আটপাড়ায় অনিবার্ণ সংঘ নামক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে সকল ছাত্রলীগ,যুবলীগের নেতা-কর্মীদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে আমি ঐ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে জাতীয় কর্মসূচী পালন করি। উক্ত সংঘের সকলকে নিয়ে আওয়ামীলীগের সকল নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করি। পরবর্তীতে ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগ দিলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব নিয়ে সকল নেতা-কর্মীকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করি। ১৯৯০-এর গণ-আন্দোলন ও ১৯৯১-এর নির্বাচনোত্তর বিএনপি সরকারের সকল অবৈধ কর্মকান্ড বিরোধী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আন্দোলনে- নেত্রকোণা জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব নিয়ে জেলার ৮৬টি ইউনিয়ন, ৭৭৪টি ওর্য়াড, ৫টি পৌরসভায় কৃষকলীগের কমিটি গঠন করি। তৎসময়ে আপনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে আপনার ঘোষিত সকল প্রকার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হই এবং গণ-আন্দোলন, গণ-জাগরণ সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সভা-সমাবেশ, ঘেরাও কর্মসূচী ও স্মারকলিপি প্রদান, অসহযোগ আন্দোলন, ট্রেন, রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে জনতার মঞ্চ তৈরী করে হাজার হাজার লোকের জমায়েত করে জেলা আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগি অঙ্গ-সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনতা সহ নেতা-কর্মীরা সার্বক্ষণিক বক্তব্য দেয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করি। ১৯৯৫ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী থেকে ২৮শে মার্চ পর্যন্ত সমগ্র জেলাব্যাপী কৃষকলীগের নেতৃত্বে প্রায় ৫হাজার হতে সর্বশেষ ২৮শে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৪০হাজার কৃষক নিয়ে সার চোর-গম চোর কৃষক খুনি খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দূর্বার কৃষক আন্দোলন সেদিন মাঠ-ঘাট-রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তৎকালীন কৃষক আন্দোলনে এক জন কৃষকলীগ নেতা নিত্যানন্দ কর্মকার ও এক জন পুলিশ কনস্টেবল ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। তখনকার বিএনপি’র সরকার ডিসি অফিস, এসপি অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস, স্টেশন ভাঙ্গা, সার লুট, ও পুলিশ হত্যার দায়ে আমাকে সহ ৫৩জন কৃষকলীগের নেতা এবং ১৭হাজার কৃষককে দায়ী করে থানায় মামলা করে। পরম শ্রদ্ধেয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপনি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ৩১শে মার্চ ১৯৯৫সালে সরেজমিনে বি.এ.ডি.সি (কে.ডি.সি) চত্ত্বর পরিদর্শন শেষে আমাকে উদ্ধার করে নেত্রীর গাড়ীতে বসিয়ে নেত্রকোণা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশাল জনসভায় ৯১টি গ্রামের পুলিশি নির্যাতন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং আমাদের মুক্তির দাবিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ প্রদান করে, আমাকে ঢাকায় নিয়ে হাইকোর্টে আমাকে সহ সকল নেতৃবৃন্দের আগাম জামিন করান। ঔ মামলায় ৫বছর ২মাস আইনী লড়াই করে মামলটি হতে খালাসে মুক্তি পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামাত-বিএনপি জয়ী হওয়ার পর তাদের ঘোষিত অবৈধ প্রতিটি কর্মকান্ড-কর্মসূচী সহ জোট সরকারে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পুলিশের শতবাঁধা অতিক্রম করে ব্যাপক গণ-সংযোগ ও সভা-সমাবেশে সক্রিয় নেতৃত্ব দেই। ২০০৭ সালের ১/১১-এর অবৈধ সরকারে আমলে নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগ তখনকার সময় কোনো প্রকার কর্মসূচী গ্রহণ করে নাই। ঐ অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেনাশাসন সার্বক্ষণিক টহল ভয়ভীতি ও আপনাকে গ্রেফতার করলে আপনার মুক্তির দাবিতে নেত্রকোণা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কেউ রাস্তায় না আসলেও আমি কৃষকলীগকে নিয়ে চল্লিশা নামক স্থানে ১৫মিনিটের মানববন্ধন করায় সেনাবাহিনীর রোষানলে পড়ে বাসা ছেড়ে ৮৬টি ইউনিয়নে ঘরোয়া পরিবেশে ব্যাপক গণ-সংযোগ করি এরই কারণে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আমাকে নেত্রকোণা সার্কিট হাউজে নিয়ে আটক রেখে মারাত্নক নির্যাতন করে। এসময় আমার শুভাকাঙ্খী ২/৩জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্ণেল ফোনে নেত্রকোণার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ণেলকে সুপারিশ করলে রাত ২টার সময় আমাকে মুক্তি দেয় কিন্তুু মুক্তি পেয়ে গণ-সংযোগ অব্যাহত রাখি। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন আওয়ামী যুবলীগের নেত্রকোণা জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো।

কেশব রঞ্জন সরকার আরও বলেন, আওয়ামীলীগের দীর্ঘ ৪০বছরের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের নেতৃত্বে থেকে সামরিক সরকার জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা জিয়া সরকারের দুঃশাসন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি অসংখ্যবার।

কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, বর্তমান সরকার বার বার দরকার- অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় উন্নত বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নের পক্ষে দায়িত্ব পালণ করার জন্য নেত্রকোণা জেলা সার, বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য। জেলা কৃষিঋণ কমিটির সদস্য, কৃষি-খাস জমি ব্যবস্থপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সদস্য, জেলা ধান-চাউল ক্রয় কমিটির সদস্য, জেলায় একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য, জেলা কৃষি পূর্নবাসন কমিটির সদস্য, জেলা অর্পিত সম্পত্তি কমিটির সদস্য এবং নেত্রকোণা পৌরসভার নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছি।

আগামীনিউজ/নাসির