যুগ যুগ ধরে মাপামাপি হয়, সেতু হয় না !

আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৭, ২০২১, ০৩:২৯ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

ঠাকুরগাঁও: কুলিক নদের ওপর বাঁশের সাঁকো। নদ পার হতে ছয়-সাত কিলোমিটার ঘুরতে হয় গ্রামের বাসিন্দাদের। ‘কত্ত বছর ধরিয়া শুনচু এইঠে একখান বিরিজ (সেতু) হচে। কতবার মাপামাপি ইইল। কিন্তু বিরিজ আর হচেনি।’ কথাগুলো ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের রহরমপুর গ্রামের রমিজ উদ্দিনের (৭২)। শুক্রবার সকালে উপজেলার রাউতনগর এলাকায় কুলিক নদ পার হওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয়।

কবে হবে নতুন ভাবে সংস্কার তার কোন হদিস নেই। ঐ এলাকার মানুষদের যেন এটি মরার উপর খাড়ার ঘা। ব্রিজটি নির্মাণের বছরই ভেঙে যায়। প্রায় তিন যুগের কাছাকাছি সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন ভাবে সংস্কার করা হয়নি।

কুলিক নদের পারে রসুলপুর ও রাউতনগর এলাকার লোকজন জানান, নদের রাউতনগর এলাকার পূর্ব পারে রসুলপুর, বর্মপুর, বারডাঙ্গী, একান্নপুর, বিরাশী, উমরাডাঙ্গী, লেহেম্বাসহ ১১টি গ্রাম আছে। আর পশ্চিম পারে রাউতনগর, কাঠালডাঙ্গী, পদমপুরসহ আরও আটটি গ্রাম এবং রাউতনগর উচ্চবিদ্যালয়, কাঠালডাঙ্গী কৃষি কলেজ, কাঠালডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয় ও কাঠালডাঙ্গী হাট অবস্থিত।

তাই পূর্ব পারের শিক্ষার্থী ও কৃষকদের নদ পার হয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও হাটে যেতে হয়। আবার পূর্ব পারে লেহেম্বা, ফকিরহাট, গোগরহাট থাকায় পশ্চিম পারের লোকজনকে মালামাল কেনাবেচা করতে এই পারে যেতে হয়। শুকনো মৌসুমে ওই এলাকার লোকজনকে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়।

কাঁঠালডাঙ্গী হাটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৫২) জানান, কুলিক নদের রাউতনগর এলাকা ছাড়া অন্য পথে কাঠালডাঙ্গী হাটে যেতে হলে ১০-১১ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাই তিনি দোকানের মালামাল নিয়ে পানি দিয়ে নদ পার হন। এতে তাঁর অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘এইঠে একখান ব্রিজ হইলে জীবনটা শান্তি পাইবে।’

সরেজমিনে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা–ভ্যানে লোকজনকে নদ পার হতে দেখা যায়। সাঁকোর একপাশে বসে শামসুল হক নামের একজন নদ পারাপারের টাকা আদায় করছিলেন। তিনি জানালেন, ৩৩ বছর ধরে তিনি নিজের খরচে সাঁকো তৈরি করে মানুষের পারাপারের ব্যবস্থা করছেন। বিনিময়ে যে যা দেন, তা নেন।

এ সময় বিরাশী গ্রামের কৃষক রমজান আলী (৫৫) বলেন, ‘সেতুর জন্য সরকারি লোকজন এসে মাপামাপি করার সময় আশ্বস্ত হই। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও আশ্বাস দেন। কিন্তু সেতু হয় না। বর্ষা মৌসুমে নদ পারাপারে ঝুঁকি থাকে। অনেকবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন,
গত বছর নদ পার হওয়ার সময় তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।

ঠাকুরগাঁও তিন আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ জানান রাউতনগর ব্রিজটি নতুন করার দাবি ঐ এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিনের। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর এটি নিয়ে সংসদে কথা বলেছি। আশা রাখি আগামী দু'মাসের মধ্যে ব্রিজটির জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার মত টেন্ডার হবে।

রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম বলেন, কুলিক নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন।

উপজেলা প্রকৌশলী তারেক বিন ইসলাম বলেন, রাউতনগর এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত-
জনবহুল এলাকা রাউতনগর এলাকার মানুষের জন্য ১৯৮৬- ৮৭ সালের দিকে একটি ১৫০ মিটারের ব্রিজ নির্মাণ হয়। নির্মাণের ওই বছরেই ভয়াবহ বন্যায় ব্রিজটি দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে যায়। আর এরপর এখানে মেরামত কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

আগামীনিউজ/ হাসান